জাতিঃ
জাতি হচ্ছে একটি সম্প্রদায় যা একটি সাধারণ ভাষা, অঞ্চল, ইতিহাস, জাতিগততা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। স্পষ্টতই, জাতি উপজাতি হতে অধিক রাজনৈতিক। সাধারণভাবে একে বলা যায়, “জাতি হচ্ছে একত্রিত ও প্রতিষ্ঠিত উপজাতি সম্প্রদায়। কিছু জাতি উপজাতি গোষ্ঠীর সমান বলে বিবেচ্য আবার কিছু জাতি গড়ে ওঠে সামাজিক ও রাজনৈতিক কিছু নির্দিষ্ট সংবিধান অনুসরণ করে।
জাতির অন্য একটি সংজ্ঞা হচ্ছে, এটি একটি সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়ের জনগণ নিজেদের স্বায়ত্তশাসন, ঐক্য ও অন্যান্য অধিকারের ব্যাপারে সচেতন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, একটি জাতি হলো একটি ভূ-খন্ডের স্বাধীন ও সার্বভৌম অঞ্চল।
রাষ্ট্র:
রাষ্ট্র বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।
ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাববিস্তারী সঙ্গানুযায়ী রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইনানুগ বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী, নাগরিক, সমাজ, আমলাতন্ত্র, আদালত এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে মতভিন্নতার কারণে তাত্ত্বিক মহলে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে যে ঠিক কিভাবে একটি “সার্থক রাষ্ট্র” এর অভ্যুদয়কে সমর্থন করা যেতে পারে।
জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য:
জাতি হচ্ছে একটি সম্প্রদায় যা একটি সাধারণ ভাষা, অঞ্চল, ইতিহাস, জাতিগততা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরুপ-
১। জাতি গঠনের পূর্বশর্ত জাতীয়তাবোধ। অন্যদিকে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ব্যতীত রাষ্ট্র গঠন করা যায় না।
২। জাতি হলো ক্ষুদ্র জনসমষ্টি নিয়ে গঠিত একটি মানব সমাজ। অন্যদিকে রাষ্ট্র হলো ব্যাপক জনসমষ্টি নিয়ে গঠিত একটি মানব সমাজ।
৩। জাতি গঠনে রাজনৈতিক সংগঠন থাকা আবশ্যক। অন্যদিকে রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক,প্রশাসনিকসহ সকল সংগঠন থাকা আবশ্যক।
৪। জাতির জনসমষ্টির ভাষা ,কৃষ্টি , ধর্ম ও আচার-ব্যবহার প্রভৃতির মধ্যে মিল থাকে। অন্যদিকে রাষ্ট্র বৃহৎ প্রকৃতির হওয়াই এর ভাষা ,কৃষ্টি , ধর্ম ও আচার-ব্যবহার প্রভৃতির ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়।
৫। জাতি রাষ্ট্রের স্থায়ী জনসমষ্টির পরিমাণ কম থাকে। অন্যদিকে রাষ্ট্রের আয়তন বৃহৎ হওয়াই স্থায়ী জনসমষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে।
৬। জাতীয় সমাজ স্বাধীন বা স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দলে সংগঠিত হয়ে জাতিতে পরিণত হয়। অন্যদিকে সমাজে শান্তি -শৃঙ্খলার বজাই রাখার জন্য এবং বহিঃশক্তির আক্রমণ প্রতিরোধ করে নিজেদের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
৭। জাতি একটি সার্বভৌম সংগঠন । অন্যদিকে কোন রাষ্ট্র প্রকৃত পক্ষে সার্বভৌম কিনা তা অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করে ।