বাস্তব জগৎ (Real World) :
বাস্তব জগৎ হল এমন একটি জগৎ যা আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারি। এটিতে আমরা যেসব বস্তু, মানুষ, প্রাণী, এবং ঘটনা দেখতে, শুনতে, স্পর্শ করতে, স্বাদ নিতে, এবং গন্ধ নিতে পারি তা সবই বাস্তব জগতের অংশ। বাস্তব জগৎ প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট এবং এটি আমাদের চারপাশে বিদ্যমান।বাস্তব জগৎ আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি থেকে আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করি, বাস্তব মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ি, এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করি। বাস্তব জগতের কিছু বৈশিষ্ট্য হল:
i. বাস্তব জগৎ প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট।
ii. বাস্তব জগৎ আমাদের চারপাশে বিদ্যমান।
iii. বাস্তব জগৎ আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায়।
iv. বাস্তব জগৎ সীমাবদ্ধতা প্রকৃতির দ্বারা নির্ধারিত।
v. বাস্তব জগৎ বাস্তব জীবনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে।
ভার্চুয়াল জগৎ (Virtual World) :
আমরা সাধারণত মানুষের জীবনে দু’টি জগতের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানি। প্রথমত, ইহকাল তথা দুনিয়ার জগৎ ও পরকাল তথা মৃত্যুর পরের জগৎ। তবে আধুনিক যুগে ভার্চুয়াল জগৎ নামে তৃতীয় একটি জগৎ তৈরি হয়েছে। বর্তমান বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ভার্চুয়াল জগতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভার্চুয়াল জগতের প্রভাবে ইহকাল ও পরকাল এই দুই জগৎকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্র গ্রাস করে নিয়েছে। আমাদের প্রতি দিনের শুরু থেকে শেষ এই ভার্চুয়াল জগৎ ঘিরে আবর্তিত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের কাজগুলো যেমন সহজ করে দিয়েছে, তেমনি পারিবারিক দায়িত্ব, সামাজিক দায়বদ্ধতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সম্প্রীতি, ভালোবাসাকে কেমন জানি ফ্যাকাসে করে দিয়েছে।
ভার্চুয়াল ল্যাটিন শব্দ যা ভার্চু থেকে এসেছে। ভার্চুয়াল শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ ‘কার্যসিদ্ধ’ বা ‘কার্যকর ক্ষমতাসম্পন্ন’। ভার্চুয়াল বলতে বোঝায় এমন কিছু যা অনুভবে আছে কিন্তু বাস্তবে নেই। ‘ফলত বটে, কিন্তু বাহ্যত নয় এমন’, বলা যায়, এটি এমন কিছু যার বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। ভার্চুয়াল জগৎ হচ্ছে এমন এক জগৎ যেখানে মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটে কম্পিউটার, মোবাইল তথা যন্ত্রের সহযোগিতায়। মূলত ইন্টারনেটভিত্তিক জগৎকে ভার্চুয়াল জগৎ বলা হয়। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড বা ভার্চুয়াল জগৎ পরিভাষাটি প্রথমবার ব্যবহার করেন উইলিয়াম গিবসন। তিনি হচ্ছেন সায়েন্স ফিকশনের বিখ্যাত লেখক। মানুষে মানুষে যে যোগাযোগ ও লেনদেন তা বাস্তব জগতের বিপরীতে বিশ্বজনীন এবং এখানে একজন ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখতে পারে।
বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে পার্থক্যঃ
বাস্তব জগৎ ও ভার্চুয়াল জগত উভয়ই আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাস্তব জগৎ ও ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ-
১. বাস্তব জগৎ হল এমন একটি জগৎ যা আমরা আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারি। এটিতে আমরা যেসব বস্তু, মানুষ, প্রাণী, এবং ঘটনা দেখতে, শুনতে, স্পর্শ করতে, স্বাদ নিতে, এবং গন্ধ নিতে পারি তা সবই বাস্তব জগতের অংশ।
অন্যদিকে, ভার্চুয়াল জগত হল এমন একটি জগৎ যা কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এটিতে আমরা যেসব বস্তু, মানুষ, প্রাণী, এবং ঘটনা দেখতে, শুনতে, স্পর্শ করতে, স্বাদ নিতে, এবং গন্ধ নিতে পারি তা সবই ভার্চুয়াল জগতের অংশ।
২. বাস্তব জগৎ প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট এবং এটি আমাদের চারপাশে বিদ্যমান। অন্যদিকে, ভার্চুয়াল জগত আমাদের মনের দ্বারা সৃষ্ট এবং এটি কম্পিউটারের স্ক্রিনে বিদ্যমান।
৩. প্রকৃত অর্থে বাস্ববে যা ঘটে তাই বাস্তব জগৎ। অন্যদিকে, বাস্তবের চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞান নির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল জগৎ বলে। ভার্চুয়াল জগতে বাস্তবকে শুধু উপলব্ধি করা যায়।
৪. বাস্তবিকভাবে যেসব ঘটনার জন্ম হয় তা নিয়েই বাস্তব জগৎ। অন্যদিকে, প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতন উদ্রেককারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাই হলাে ভার্চুয়াল জগৎ।
৫. বাস্তব জগৎ থেকে আমরা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করি, বাস্তব মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ি, এবং বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা অর্জন করি। অন্যদিকে, ভার্চুয়াল জগৎ আমাদের বিনোদন, শিক্ষা, এবং ব্যবসায়িক কাজে সহায়তা করে।
৬. বাস্তব জগতে মানুষ শূন্যে উড়ে যেতে পারে না, ১০০ তলা ভবন থেকে লাফ দেওয়া কল্পনাও করতে পারে না। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বাস্তব জগৎ তৈরি করে। এসব বিষয়গুলো উপলব্ধি করা যায়, যা বাস্তবে সম্ভব হয় না।