Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য

ধর্ম ও দর্শনের

ধর্ম (Religion):

ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত √ধৃ হতে । একজন ব্যক্তি তার জীবনে তার যত প্রকার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে সব মিলিয়ে হয় তার ধর্ম। তার বিশ্বাস, তার পরম্পরাগত শিক্ষা, তারা আচার ব্যবহার ইত্যাদি এই সবই তার ধর্ম। সাধারণ মানুষ ধর্মকে ধারণ করে, বা ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে ঈশ্বরের প্রতি নিজের আনুগত্য প্রকাশ করে ইহজগত ও পরজগতে শান্তি ভোগ করার আশা পোষণ করে। বিভিন্ন চিন্তাবিদ ধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন।

ধর্ম উচ্চতর মূল্যের গভীর ও সহজ প্রকৃতিমূলক অনুভূতির উপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষ তার নিজের আত্মার পূর্ণতা লাভের মাধ্যমেই ঈশ্বরকে চেনার প্রচেষ্টা চালায়। তাই সূফীবাদে বলা হয় যে, যে ব্যক্তি আত্মাকে চিনেছে, সে ব্যক্তি তার প্রভুকে চিনেছে। ধর্ম হলো এমন একটি ভাব বাদৃষ্টিভঙ্গি, যা বিশ্বাসের দৃষ্টিভঙ্গি এবং যে বিশ্বাসের ফলে মানুষ মনে করে যে, এ জগৎ যান্ত্রিক নয়, বরং এ জগতের সৃষ্টির পিছনে একজন সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর রয়েছেন, যিনি ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও পাপ-পুণ্যের বিচার করেন।

দর্শন (Philosophy):

ইংরেজি Philosophy শব্দের প্রতিশব্দ ‘দর্শন’। দর্শন শব্দটি মূলতঃসস্কৃতি শব্দ যার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে বস্তুর প্রকৃত সত্তা বা তত্ত¡ দর্শন। সস্কৃতি ‘দৃশ’ধাতু থেকে দর্শন শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ হচ্ছে দেখা। এখানে দেখা শব্দটি তত্ত¡ দর্শন বা জীবন-জগতের স্বরূপ উপলব্ধি কে বুঝায়। অন্যদিকে ইংরেজি Philosophy শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ Philos এবং Sophia থেকে। Philos অর্থ অনুরাগ এবং Sophia অর্থ জ্ঞান বা প্রজ্ঞা। তাই Philosophy শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ জ্ঞন বা প্রজ্ঞার প্রতি অনুরাগ। আর সে দিক থেকে বিচার করলে জ্ঞানানুরাগী বা প্রজ্ঞানুরাগী ব্যক্তি মাত্রই এক একজন দার্শনিক। সংক্ষেপে বলা যায় প্রজ্ঞাপ্রীতিই দর্শন, আর প্রজ্ঞা প্রেমিকই দার্শনিক।

গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাস (খ্রি. পূর্ব আনুমানিক ৫৭২-৪৯৯) সে কারণেই একজন দার্শনিক হিসেবে স্বীকৃতি ও সুখ্যাতি লাভ করেন। যদিও বাংলায় ‘দর্শন’ শব্দটি ইংরেজি Philosophy শব্দটি থেকে ভিন্ন, তথাপি আলোচনার বিষয়বস্তু ও লক্ষ্য উদ্দেশ্যের দিক দিয়ে উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃ্শ্য রয়েছে। উভয়ের উদ্দেশ্য জ্ঞানানুরাগ বা প্রজ্ঞানুরাগ। আলোচ্য বিষয়ের এ সাদৃশ্যের কথা বিবেচনা করেই বঙ্গভারতীয় পন্ডিত গণ Philosophy -র বাংলা প্রতিশব্দরূপে দর্শন শব্দটি ব্যবহার করে আসছেন।

ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্যঃ

ধর্ম শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত √ধৃ হতে । একজন ব্যক্তি তার জীবনে তার যত প্রকার বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে । ধর্ম ও দর্শনের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১. দর্শনের কাজ হলো প্রধানত বুদ্ধিভিত্তিক বা বিচারভিত্তিক। অন্যদিকে, ধর্মের কাজ হলো বিশ্বাসভিত্তিক বা ব্যবহারিক।

২. দর্শনের ক্ষেত্রে জগতের রহস্যকে জানার ব্যাপারে বিচার-বিবেচনার পথকে অনেকাংশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, ধর্মের ক্ষেত্রে অন্ধ বিশ্বাস বা সরল বিশ্বাসের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে মিলনের জন্য মানুষ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা ও ব্যবহারিক আচরণের সাহায্য নিয়ে থাকে।

৩. দর্শনের মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান বা সত্যের প্রতি অনুরাগ। অন্যদিকে, ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তি, সংহতি, মুক্তি ইত্যাদির প্রতি অনুরাগ। তাই ধর্মের ক্ষেত্রে বিচার-বিবেচনার পরিবর্তে উপলব্ধি বা হৃদয়ের প্রয়োগই হয় বেশি।

৪. দর্শনে কোন আচার-অনুষ্ঠান নেই। অন্যদিকে, ধর্মে আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে এবং ধর্মকে এ গুলো মেনে চলতে হয়।

৫. দর্শন বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জাগতিক সত্তার স্বরূপ নিরূপণ করার প্রচেষ্টা চালায়। অন্যদিকে, ধর্ম অন্তর দিয়ে আধ্যাত্মিক সত্তার
স্বরূপকে উপলব্ধি করার প্রচেষ্টা চালায়।

Exit mobile version