শ্বসন (Respiration):
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে মুক্ত হয় তাকে শ্বসন (Respiration) বলে ।
শ্বসন একটি বিপাকীয় ক্রিয়া। এ প্রক্রিয়া চলাকালে প্রতিটি জীব পরিবেশ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। শারীরবৃত্তীয় শ্বসন হল বাতাস হতে জীবের কলাতন্ত্রে অক্সিজেনের সরবরাহের এবং বিপরীত প্রক্রিয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন প্রক্রিয়া। শারীরবৃত্তীয় শ্বসন প্রাণরসায়ন সং জ্ঞায়িত কোষীয় শ্বসন হতে আলাদা যা জীবের কোষে সংঘটিত হয় এবং এক্ষেত্রে অক্সিজেনের সাথে গ্লুকোজের রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোষ তার প্রয়োজনীয় শক্তি লাভ করে। শারীরবৃত্তীয় শ্বসন এবং কোষীয় শ্বসন উভয়েই জীবের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য।
সরল এককোষী জীবের ক্ষেত্রে গ্যাস আদান-প্রদানের জন্য সাধারণ ব্যাপন প্রক্রিয়া যথেষ্ট কেননা প্রতিটি কোষ বাইরের সরাসরি বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে থাকে, কিন্তু জটিল বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে পরিবেশ এবং একদম ভেতরের কোষগুলোর মাঝে দূরত্ব অনেক বেশি, কাজেই আলাদা শ্বসনতন্ত্রের প্রয়োজন হয়।
শ্বাসকার্য(Breathing):
যে যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জীবদেহে সবাত শ্বসনের জন্য শ্বাসঅঙ্গের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে বেশি অক্সিজেন (02) যুক্ত বায়ু গ্রহন বা প্রশ্বাস এবং বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড (C০2) যুক্ত বায়ুর বর্জন বা নিশ্বাস ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে শ্বাসকার্য বলে। সকল উন্নত প্রাণীদের কোষীয় শ্বসনের জন্য অক্সিজেনের প্রয়োজন। মানুষ যখন শ্বাস গ্রহণ করে তখন নাসারন্ধ্র দিয়ে অক্সিজেন শ্বাসনালী পথে ফুসফুসে গিয়ে পৌঁছায়। ফুসফুসের অ্যালভিওলাস ও রক্তচাপের পার্থক্যের জন্য অক্সিজেন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় ধমনীর রক্তে প্রবেশ করে দেহের কোষ গুলো তে পৌঁছায়।
অন্যদিকে শর্করা জারণের ফলে কোষে অপদ্রব্য হিসেবে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড দেহের জন্য খুুবই ক্ষতিকর । কার্বন ডাই অক্সাাইড কোষ থেকে রক্তে প্রবাহিত হয়ে ফুসফুুুসে এসে পৌঁছায়। এরপর ফুসফুস থেকে নাসারন্ধ দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড দেহ থেকে বায়ুতে উন্মুক্ত হয়। শ্বাসক্রিয়া বা বহিরাগত শ্বসন, ফুসফুসের মধ্যে বায়ু নিয়ে আসে যেখানে গ্যাস বিনিময়টি ক্ষুদ্র রন্ধ্রে সঞ্চালনের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। শরীরের সংবহনতন্ত্র থেকে এই গ্যাসগুলিকে স্থানান্তর করে, যেখানে “সেলুলার শ্বাসযন্ত্র” ঘটে।
শ্বসন ও শ্বাসকার্যের মধ্যে পার্থক্য:
শারীরবৃত্তীয় শ্বসন এবং কোষীয় শ্বসন উভয়েই জীবের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। শ্বসন ও শ্বাসকার্যের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
১। শ্বসন একটি জৈব রাসায়নিক জারণ প্রক্রিয়া। অন্যদিকে শ্বাসকার্য একটি নিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
২। শ্বসন সজীব কোষের ভিতরে ঘটে অর্থাৎ অন্তঃকোশীয় প্রক্রিয়া। অন্যদিকে শ্বাসকার্য শ্বাসঅঙ্গে ঘটে অর্থাৎ বহিঃকোশীয় প্রক্রিয়া।
৩।শ্বসন প্রক্রিয়ায় শক্তি বা ATP উৎপন্ন হয় । অন্যদিকে শ্বাসকার্যে শক্তি বা ATP উৎপন্ন হয় না ।
৪।শ্বসন সব জীবেই ঘটে। অন্যদিকে শ্বাসকার্য সব জীবে ঘটে না।
৫। শ্বসন গ্লাইকোলাইসিস, ক্রেবস চক্র ও প্রান্তীয় শ্বসন তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। অন্যদিকে শ্বাসকার্য প্রশ্বাস ও নিশ্বাস দুটি পর্যায়ে বিভক্ত।