রিকার্ডোর ও আধুনিক খাজনা তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য

রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব (Ricardian Theory of Rent) :
David Ricardo ছিলেন ইংল্যান্ডের কণিষ্ঠতম Classical অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৮১৭ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Principle of Political Economy and Taxation” – এ খাজনা সম্পর্কে যে মতামত প্রকাশ করেন, তা তাঁর নামানুসারে রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব নামে পরিচিত। রিকার্ডোর বক্তব্য অনুসারে প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতার কারণে অর্থাৎ জমির মৌলিক ও অবিনশ্বর গুণের কারণে জমি থেকে ফসল পাওয়া যায়। সেই ফসলের অংশ যা জমির মালিককে দেওয়া হয়, তাই হলো জমির খাজনা। প্রকৃতি অকৃপণভাবে মানুষকে জমির যোগান দেয়নি। তাই রিকার্ডো মনে করেন চাহিদার তুলনায় জমির যোগানের স্বল্পতার কারণে খাজনার উদ্ভব হয়। ভূমিবাদি অর্থনীতিবিদগণ মনে করতেন প্রকৃতির দয়ায় খাজনা পাওয়া যায়। কিন্তু রিকার্ডোর মতে প্রকৃতির কৃপণতাই খাজনার জন্য দায়ী। প্রকৃতি যদি কৃপণ না হত অর্থাৎ উর্বর জমি যদি অফুরন্ত পাওয়া যেত, তা হলে জমি থেকে খাজনার উৎপত্তি হত না। জমির পরিমাণ যেহেতু প্রয়োজনের তুলনায় কম, তাই খাজনার উৎপত্তি ঘটে।

রিকার্ডো আরও মনে করে, খাজনা হলো উৎপাদকের উদ্বৃত্ত। জমির উর্বরতার পার্থক্যের কারণে সেই উদ্বৃত্ত আয় বা খাজনা দেখা দেয়। একই দৃষ্টিকোণ থেকে খাজনাকে প্রার্থক্যজনিত আয় বলা যায়। বিভিন্ন জমির মধ্যে উর্বরতার পার্থক্য আছে। কোন জমি বেশি উর্বর এবং কোনটি কম উর্বর। প্রথমে বেশি উর্বর জমি চাষের আওতায় আসে। তারপর ফসলের চাহিদা বাড়লে ক্রমেই অনুর্বর জমি চাষের আওতায় আনতে হয়। যে জমি চাষ করার পর প্রাপ্ত ফসলের দাম দ্বারা কেবল চাষের খরচ নির্বাহ করা যায়, কিন্তু কোন উদ্বৃত্ত পাওয়া যায় না, সেই জমিকে প্রান্তিক জমি বলে। প্রান্তিক জমির খাজনা নেই। প্রান্তিক জমির তুলনায় উর্বর জমিতে প্রাপ্ত অতিরিক্ত ফসল হলো খাজনা।

আধুনিক খাজনা তত্ত্ব (Modern Theory of Rent) :
রিকার্ডো প্রদত্ত খাজনাতত্ত্বের ত্রুটিগুলো দূর করে আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ খাজনা সম্পর্কে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তা আধুনিক খাজনা তত্ত্ব নামে অভিহিত। আধুনিক খাজনা তত্ত্বে Mrs. Joan Robinson, Boulding, G. Stigler, Shephered, P. A. Samuelson – এর অবদান বিশেষভাবে স্বীকৃত। খাজনার আধুনিক সংজ্ঞায় Mrs. Joan Robinson বলেন, “উৎপাদেনের কোনো উপাদানকে যে ন্যূনতম দামে কাজে নিযুক্ত করানো যায়, তা অপেক্ষা যে উদ্বৃত্ত পারিশ্রমিক পায়, তাকে খাজনা বলে।”

আধুনিক খাজনা তত্ত্ব অনুযায়ী খাজনাকে উদ্বৃত্ত আয় গণ্য করলেও তা রিকার্ডোর বক্তব্য থেকে ভিন্ন। আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, জমির মতো অন্যান্য উপাদানও খাজনা অর্জন করতে পারে। অন্যান্য উপাদানের মতোই জমির চাহিদা ও যোগান দ্বারা এর খাজনা নির্ধারিত হয়।

রিকার্ডোর ও আধুনিক খাজনা তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্যঃ
David Ricardo ছিলেন ইংল্যান্ডের কণিষ্ঠতম Classical অর্থনীতিবিদ। রিকার্ডোর ও আধুনিক খাজনা তত্ত্বের মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে। পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। David Ricardo ছিলেন ইংল্যান্ডের কণিষ্ঠতম Classical অর্থনীতিবিদ। তিনি ১৮১৭ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Principle of Political Economy and Taxation” – এ খাজনা সম্পর্কে যে মতামত প্রকাশ করেন, তা তাঁর নামানুসারে রিকার্ডোর খাজনা তত্ত্ব নামে পরিচিত।

অন্যদিকে, রিকার্ডো প্রদত্ত খাজনাতত্ত্বের ত্রুটিগুলো দূর করে আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ খাজনা সম্পর্কে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেন, তা আধুনিক খাজনা তত্ত্ব নামে অভিহিত।

২। জমির খাজনার ক্ষেত্রেই শুধু রিকার্ডোর তত্ত্ব প্রযোজ্য। রিকার্ডোর তত্ত্বে শুধু জমিই খাজনা উপার্জন করতে পারে। অন্যদিকে, আধুনিক খাজনা তত্ত্ব অনুযায়ী উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণও খাজনা উপার্জন করে।

৩। রিকার্ডোর তত্ত্ব অনুযায়ী জমির উৎপাদন ক্ষমতার পার্থক্য ও জমির দুষ্প্রাপ্যতার জন্য খাজনার উদ্ভব হয়। অন্যদিকে, আধুনিক তত্ত্ব অনুযায়ী উপকরণের অস্থিতিস্থাপক যোগান অর্থাৎ নির্দিষ্টতার জন্য খাজনার উদ্ভব হয়।

৪. রিকার্ডোর তত্ত্ব অনুযায়ী জমির যোগান স্থির এবং এর কোনো যোগান দাম নেই। এই দিক থেকে জমির স্থানান্তর আয় বা যোগান দাম শূন্য এবং উপার্জনের পুরোটাই খাজনা।

অন্যদিকে, আধুনিক অর্থনীতিবিদরা জমির খাজনার ব্যাখ্যা করেছেন কোনো ব্যক্তি বা উৎপাদনকারীর দিক থেকে। এক্ষেত্রে জমির যোগান সম্পূর্ণ অস্থিতিস্থাপক নয়। ফলে কোনো ফার্ম বা ব্যক্তি বেশি খাজনা দিলে সর্বদাই বেশি জমি পেতে পারে। আধুনিক খাজনা তত্ত্বে জমির উপার্জনের একটি অংশই তার ন্যূনতম যোগান দাম বা স্থানান্তর আয়।

৫। রিকার্ডোর তত্ত্বে খাজনাকে উদ্বৃত্ত বলা হয়েছে। ফলে খাজনা বাড়লেও উৎপন্ন ফসলের দাম বাড়ে না। এই তত্ত্ব অনুযায়ী খাজনা দামকে নির্ধারণ করে না, দামই খাজনা নির্ধারণ করে।

অন্যদিকে, আধুনিক খাজনা তত্ত্ব অনুযায়ী উৎপাদনের অন্যান্য ব্যয়ের মতো খাজনাও একটি ব্যয়। কারণ উৎপাদনের অন্যতম উপকরণ জমির জন্যও উৎপাদককে দাম দিতে হয়। জমির জন্য বেশি দাম দিতে হলে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ে। ফলে দ্রব্যের দামেও এর প্রভাব পড়ে।