কথা ঠিক যে ভাত আর রুটি দুটোই শর্করা বা শর্করা। সব শর্করাই খাওয়ার পর পরিপাকতন্ত্রে গিয়ে ভাঙে, তারপর রক্তে শোষিত হয় গ্লুকোজ বা মনোস্যাকারাইড হিসেবে। সেই গ্লুকোজ হলো আমাদের মূল চালিকা শক্তি। শরীরের প্রায় প্রতিটি শারীরবৃত্তীয় কাজে দরকার হয় এ গ্লুকোজ। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা দেহে সঞ্চিত হয় চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে।
আর ওজন কমাতে হলে, ডায়াবেটিস কমাতে হলে ভাতের বদলে রুটি খান। ডাক্তার ও পুষ্টিবিদেরা হরদম এ পরামর্শ দেন, সাধারণ মানুষও আজকাল তা ভালোই জানেন ও মানেন। আর সে জন্যই বিগত দশকগুলোতে বাঙালির পাতে ভাতের বদলে রুটির দেখা মিলছে একাধিক বেলায়। সকালবেলা গরম ভাত আলুভর্তা, ডাল দিয়ে মেখে খেয়ে অফিসে বা কৃষিকাজে যেতেন যে বাঙালি, দুপুরে টিফিন বা সানকি ভরে আবার ভাত যেত যাঁদের খাওয়ার জন্য, আবার সন্ধ্যায় ফিরে আবার সেই পেট পুরে ভাত খেয়ে ঘুমাতে যাওয়া সেই বাঙালির ঘরে নাকি আজকাল চালের পরিবর্তে আটা কেনার হার বেশি!
কথায় আছে ভাতে-মাছে বাঙালি। কেউ কেউ ভাত খেতে এত ভালোবাসেন যে পারলে তিন বেলাই ভাত খান। অনেকে আবার ভাত খেতে একেবারেই ভালোবাসেন না বলে রুটিকেই প্রধান খাবার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু সেটাও কি ঠিক? কোনটা বেশি উপকারী? জেনে নিন ভাত ও রুটির মধ্যে পুষ্টি উপাদানগত পার্থক্য।
৩০ গ্রাম ভাতের ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট থাকে ২৩ গ্রাম। আবার ৩০ গ্রাম আটার ক্ষেত্রে কার্বোহাইড্রেট থাকে ২২ গ্রাম। ভাতে প্রোটিন থাকে ২ গ্রাম আর আটা বা রুটির ক্ষেত্রে প্রোটিন থাকে ৩ গ্রাম। ভাতে ফ্যাট থাকে ০.১ গ্রাম এবং আটা বা রুটিতে ফ্যাট থাকে ০.৫ গ্রাম। ভাতে ফাইবার থাকে ০.১ গ্রাম এবং আটা বা রুটিতে থাকে ০.৭ গ্রাম।
ভাতে আয়রন থাকে ০.২ মিলিগ্রাম এবং রুটিতে থাকে ১.৫ মিলিগ্রাম। একই পরিমাণ ভাতে ক্যালসিয়াম থাকে ৩ মিলিগ্রাম এবং আটাতে বা রুটিতে থাকে ১২ মিলিগ্রাম। ভাতে এনার্জি থাকে ১০০ ক্যালোরি ও আটাতেও থাকে ১০০ ক্যালোরি।ভাত এবং রুটি দুটিতেই আছে প্রচুর ফলেট যা নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শিশুর জন্মগত ত্রুটি ঠেকাতেও কার্যকর। সেই কারণে গর্ভবতী মায়েদের রুটির থেকে ভাত বেশি খাওয়া ভালো। রুটি ও ভাতে আয়রনের পরিমাণ সমান হলেও ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়ামের পরিমাণ রুটির তুলনায় ভাতে কম।
তবে মনে রাখবেন অতিরিক্ত কোনটাই ভাল নয়। এ দুটি খাবারের পরিমাণ কম রেখে এর সঙ্গে বেশি বেশি সবজি রাখুন। তবে আপনার স্বাস্থ্যের সব রকম চাহিদা পূরণ হবে। তরকারি আমাদের শরিরের অনেক উপকারে আসে যেমন আমিষ যাতিয় খাবার মানে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, এই গুলো আমাদের শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সুতরাং ভাত ও রুটির পরিমান অল্প রেখে সাথে সবজি বা তরকারি বেশি করে রাকুন।