রােমান্স (Romance) :
রোমান্স সাহিত্য হল এমন সাহিত্য যা প্রেম, রোম্যান্স এবং আবেগকে কেন্দ্র করে। এটি সাধারণত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ, প্রকৃতি এবং স্বপ্নকে কেন্দ্র করে। রোমান্স সাহিত্য প্রায়শই আবেগপ্রবণ, ভাবপ্রবণ এবং কল্পনাপ্রবণ শৈলীতে লেখা হয়। অধিকাংশ ইউরােপীয় সাহিত্যে ‘নোবেল’ শব্দের পরিবর্তে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয় তার নাম রােমান (roman)। রোমান শব্দটি এসেছে মধ্যযুগের রােমান্স (romance) শব্দ থেকে। যে রােমান্সের আক্ষরিক অর্থ হল পদ্যে বা গদ্য আখ্যানে প্রেম-শৌর্য-বীর্যের এক ধরনের আনন্দদায়ক কাহিনি। যার মধ্যে বাস্তবজীবন তিরােহিত, কল্পনাশ্রয়ী, প্রেম-বীরত্বই প্রধান উপজীব্য। তবে এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল অতীতকে পুনরুদ্ধার করতে চাওয়া, অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস স্থাপন, কবিত্বময় কল্পনার উচ্ছ্বাস, জীবনের প্রাত্যহিক বাস্তবতার উর্ধে প্রস্ফুটিত মুহূর্তগুলি এক মায়াময় রহস্যে ধরতে চাওয়া। সব মিলিয়ে- “যে কথাশ্রয়ী শিল্পে সম্ভব-অসম্ভবের মধ্যেকার সীমানাটি সৃক্ষ্ম, অলৌকিক এবং অতি প্রাকৃত লক্ষণাক্রান্ত আর আকস্মিকের দ্বারা মন্ডিত তাকে রােমান্স বলা হয়।”
মধ্যযুগীয় রােমান্স ছিল বাস্তব সম্পর্ক রহিত, বীরত্ব ব্যাঞ্জক, আকাশমুখী কল্পকাহিনি। এ সম্পর্কে অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে Clara Reeva তাঁর Progress of Romance গ্রন্থে লিখেছেন- “The novel is a picture of real life and manners, and of The time in which it is writien. The Romance, in lofty and elevated language, describes at never happend on is a lively to happen”
নোবেল (Noble) :
উপন্যাস হলো আখ্যানমূলক কল্পকাহিনি বা উপাখ্যানের তুলনামূলকভাবে বর্ধিত একটি রচনা যেখানে লেখক তাঁর জীবনদর্শনকে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে চিত্রায়ন করেন, যা সাধারণত গদ্যে লেখা হয় এবং একটি বই হিসাবে প্রকাশিত হয়।[ উপন্যাস এমন একটি বিশেষ সাহিত্য সৃষ্টি বোঝায় যাতে লেখকের জীবনদর্শন ও জীবনানুভূতি কোন বাস্তবকাহিনি অবলম্বনে বর্ণনাত্মক শিল্পকর্মে রূপায়িত হয়। সমগ্র জীবনের প্রতিচ্ছবি এতে ফুটে ওঠে বলে এর পটভূমি থাকে বিস্তৃত। ব্যাপকতর আকৃতি, সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনাবিন্যাস, আকর্ষণীয় গল্পরস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চরিত্রসৃষ্টি, মনোমুগ্ধকর বর্ণনাভঙ্গি, সাবলীল সংলাপ ইত্যাদি লক্ষণ সার্থক উপন্যাসে অভিপ্রেত।
উপন্যাসের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এতে কোন একটি কাহিনির বর্ণনাই প্রধান হয়ে থাকে। মানব জীবনের ঘটনাবলির বর্ণনাদানের সঙ্গে সঙ্গে জগৎ ও জীবনসম্পর্কিত লেখকের বিচিত্র উপলব্ধি উপন্যাসের মধ্যে প্রকাশ পায়।
রোমান্স ও নোবেল এর মধ্যে পার্থক্যঃ
রোমান্স ও নোবেল দুটি সাহিত্যিক ধারার নাম যা ইউরোপে আবির্ভূত হয়েছিল। রোমান্স ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ এবং স্বতন্ত্রতাকে মূল্য দেয়। পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. সকল উপন্যাসকে ইংরেজিতে নোভেল বলে। অন্যদিকে, শুধুমাত্র রোমান্টিক বা প্রেমের উপন্যাসগুলোকে ইংরেজিতে রোমান্স বলে।
২. রোমান্স বা রোমান্টিকবাদ ১৮ শতকের শেষার্ধে এবং ১৯ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপে আবির্ভূত হয়। অন্যদিকে, নোবেল বা নোবেলবাদ ১৯ শতকের শেষার্ধে এবং ২০ শতকের প্রথমার্ধে ইউরোপে আবির্ভূত হয়।
৩. রোমান্স বা রোমান্টিকবাদ শিল্প বিপ্লব এবং ফরাসি বিপ্লব সহ ইউরোপে পরিবর্তনের সময়কালে আবির্ভূত হয়। অন্যদিকে, নোবেল বা নোবেলবাদ শিল্পায়ন এবং আধুনিকতার উত্থান সহ ইউরোপে পরিবর্তনের সময়কালে আবির্ভূত হয়।
৪. রোমান্স বা রোমান্টিকবাদ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ এবং স্বতন্ত্রতাকে মূল্য দেয়। অন্যদিকে, নোবেল বাস্তবতা, সমালোচনা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে মূল্য দেয়।
৫. রোমান্স বা রোমান্টিক সাহিত্য প্রায়শই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, আবেগ, প্রকৃতি এবং প্রেমকে কেন্দ্র করে থাকে। অন্যদিকে, নোবেল সাহিত্য প্রায়শই বাস্তবতা, সমালোচনা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে থাকে।
৬. রোমান্স সাহিত্য প্রায়শই আবেগপ্রবণ, ভাবপ্রবণ এবং কল্পনাপ্রবণ শৈলীতে লেখা হয়। অন্যদিকে, নোবেল সাহিত্য প্রায়শই বাস্তববাদী, সমালোচনামূলক এবং সচেতন শৈলীতে লেখা হয়।
৭. রোমান্স সাহিত্যের কিছু উদাহরণ হল ওয়াল্টার স্কটের “দ্য আইভরি টাওয়ার”, জর্জ গর্ডন বায়রনের “শালে” এবং জে এম ওয়াটার্সনের “দ্য লেডি অফ দ্য লেক”। অন্যদিকে, নোবেল সাহিত্যের কিছু উদাহরণ হল ফ্রাঞ্জ কাফকার “দ্য ট্র্যান্সফরমেশন”, রবার্ট মুসিলের “দ্য ম্যানুস্ক্রিপ্ট ফান্ড”, এবং লরেন্স দারেল “দ্য লভ লেটারস”।