দ্রবণ হল এক ধরনের মিশ্রণ যেখানে একটি পদার্থ (দ্রাব্য) অন্য একটি পদার্থে (দ্রাবক) সম্পূর্ণরূপে মিশে যায়। এই মিশ্রণের ঘনমাত্রার উপর নির্ভর করে দ্রবণকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে দুটি প্রধান ভাগ হল সম্পৃক্ত দ্রবণ ও অসম্পৃক্ত দ্রবণ। সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিচে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
সম্পৃক্ত দ্রবণ (Saturated Solution) :
কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, কোন দ্রাবকের মধ্যে কোন দ্রাব সর্বোচ্চ যে পরিমাণে দ্রবীভূত হতে পারে, তা সম্পন্ন হলে যে দ্রবণ উৎপন্ন হয়, তাকে ওই উষ্ণতায় ঐ দ্রাবের সম্পৃক্ত দ্রবণ বলে। সম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রাবকের দ্রাব গ্রহণের ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যায়, তাই দ্রাবক আর অতিরিক্ত দ্রাব গ্রহণ করতে পারে না। দ্রবণের সম্পৃক্ততা উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল। দ্রবণের উষ্ণতা বাড়লে সম্পৃক্ত দ্রবণ অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে অর্থাৎ দ্রাবকের আরও দ্রাব গ্রহণ করার ক্ষমতা জন্মে। কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় এবং চাপে সম্পৃক্ত দ্রবণে দ্রাবের পরিমান নির্দিষ্ট থাকে। উষ্ণতা বাড়লে দ্রাবকের দ্রাব গ্রহণ ক্ষমতা বাড়ে, তাই আরও দ্রাব যোগ করলে দ্রাবকের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যায়।
সম্পৃক্ত দ্রবণ এর উষ্ণতা কমালে দ্রাবকের দ্রাব গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়। যেমন ঘরের উষ্ণতায় লবণের সম্পৃক্ত দ্রবণের উষ্ণতা কমালে দ্রবন থেকে কিছু লবণ কেলাসিত হয়ে দ্রবন থেকে বেরিয়ে নিচে থিতিয়ে পড়ে। এই অবস্থাতেও কিন্তু উপরের স্বচ্ছ দ্রবণটি সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকবে। সম্পৃক্ত দ্রবণ উদাহরন- পানি ও চিনির দ্রবণ, পানি ও লবণের দ্রবণ, ভিনেগার ও পানির দ্রবণ
অসম্পৃক্ত দ্রবণ (Unsaturated Solution) :
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের দ্রাবক সর্বোচ্চ যে পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত করতে পারে, দ্রবণে সেই পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত না থাকলে প্রাপ্ত দ্রবণকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলে।
উদাহরণ- এক বীকার পানিতে এক চামচ চিনি ফেলে নাড়তে থাকলে দেখা যায়, কঠিন চিনি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আরো চিনি ঢাললে, দেখা যাবে যেটুকুও দ্রবীভূত হল এবং দ্রবণের ঘনত্বও বাড়লো। বোঝা যাবে যে, চিনি দ্রবীভূত করার ক্ষমতা দ্রবণের এখনও রয়েছে। এরূপ দ্রবণকে অসংপৃক্ত দ্রবণ বলে।
সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত দ্রবণের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, কোন দ্রাবকের মধ্যে কোন দ্রাব সর্বোচ্চ যে পরিমাণে দ্রবীভূত হতে পারে, তা সম্পন্ন হলে যে দ্রবণ উৎপন্ন হয়, তাকে ওই উষ্ণতায় ঐ দ্রাবের সম্পৃক্ত দ্রবণ বলে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের দ্রাবক সর্বোচ্চ যে পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত করতে পারে, দ্রবণে সেই পরিমাণ দ্রব দ্রবীভূত না থাকলে প্রাপ্ত দ্রবণকে অসম্পৃক্ত দ্রবণ বলে।
২. কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় একটি দ্রবণ অসম্পৃক্ত কি অসম্পৃক্ত বুঝতে হলে দ্রবণটি কে আরো কিছুটা দ্রাব যোগ করে ভাল করে নাড়তে হয়। দ্রাবটি যদি আংশিক বা সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হয়ে দ্রবণটি ঘনত্ব বাড়ায় তাহলে বুঝতে হবে যে উষ্ণতায় দ্রবণ অসম্পৃক্ত।
অন্যদিকে, যে দ্রাব যোগ করে নাড়া হল, সেই দ্রাব যদি দ্রবীভূত না হয়ে পাত্রের তলায় অদ্রাব্য অবস্থায় থিতিয়ে পড়ে এবং দ্রবণের ঘনত্ব যদি একই থাকে তাহলে বুঝতে হবে দ্রবণটি উষ্ণতায় সম্পৃক্ত অবস্থায় আছে।
৩. সম্পৃক্ত দ্রবণের উদাহরণ- পানি ও চিনির দ্রবণ, পানি ও লবণের দ্রবণ, ভিনেগার ও পানির দ্রবণ। অন্যদিকে, অসংপৃক্ত দ্রবণ উদাহরণ- এক বীকার পানিতে এক চামচ চিনি ফেলে নাড়তে থাকলে দেখা যায়, কঠিন চিনি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আরো চিনি ঢাললে, দেখা যাবে যেটুকুও দ্রবীভূত হল এবং দ্রবণের ঘনত্বও বাড়লো। বোঝা যাবে যে, চিনি দ্রবীভূত করার ক্ষমতা দ্রবণের এখনও রয়েছে। এরূপ দ্রবণই অসংপৃক্ত দ্রবণ।