বিজ্ঞান (Science):
ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। বিজ্ঞান হল ল্যাটিন শব্দ অর্থ জ্ঞান, এবং প্রকৃতপক্ষে এটা আমাদের জ্ঞান সংগ্রহ যা ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ, যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা, এবং লজিক্যাল চিন্তা থেকে পরিনত হয়েছে। এটি আমাদের জ্ঞান একটি দেহ যা আমাদের কৌতূহল থেকে শুরু করে যেমন প্রাকৃতিক এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং বজ্রধ্বনি, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদির মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা।
বস্তুত, বিজ্ঞান জীবনের একটি উপায়, মহাবিশ্ব এবং উপকরণ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান উন্নত করতে চাওয়া অধ্যয়ন যে সমস্ত শাখা। বিজ্ঞান নিউটন, আইনস্টাইন, গ্যালিলিও এবং কেপলারের মতো বিজ্ঞানীদের অগ্রগামী কাজের মাধ্যমে প্রকৃতির আইন সম্পর্কে আমাদেরকে সমৃদ্ধ করার জন্য নিজেই পরিচালিত করে। সময়ের দরুন, বিজ্ঞান, প্রমাণের উপর তার নির্দয়তা এবং দৃঢ়তার কারণে মানবিক ও দর্শনের পাশাপাশি উত্থাপিত হয়েছিল।
প্রযুক্তি (Technology):
‘প্রযুক্তি’ শব্দটি প্রাধান্য পায় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সান্নিধ্যের মাধ্যমে।এই শব্দটির অর্থ বিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তিত হয় যখন থর্স্টেইন ভেবলেন থেকে শুরু করে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীরা জার্মান Technik থেকে ‘প্রযুক্তি’ এর অনুবাদ করা শুরু করেন। প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কীভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল।
প্রযুক্তির সরলতম রূপ হল মৌলিক সরঞ্জামের বিকাশ ও ব্যবহার। প্রাগৈতিহাসিক কালে আগুন নিয়ন্ত্রণের আবিষ্কার ও পরবর্তীকালে নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব খাদ্যের উৎসের বৃদ্ধি করেছে এবং চাকার আবিষ্কার মানুষকে এই পরিবেশে পরিভ্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে। ক্রমে ক্রমে ছাপাখানা, টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের আবিষ্কার যোগাযোগ ক্ষেত্রে মানুষের শারীরিক বাঁধাকে দূর করেছে এবং মানুষকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্তভাবে যোগাযোগে সক্ষম করেছে।
বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি পারস্পারিক সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে পথ চললেও তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। অন্যদিকে, প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়।
২। বিজ্ঞান হল পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান। অন্যদিকে, প্রযুক্তি হল সেই অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।
৩। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিকে, প্রযুক্তি এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ নানা যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করছে।
৪। বিজ্ঞান শুধুই কল্যাণকর। এর কোনো খারাপ দিক নেই। অন্যদিকে, প্রযুক্তির কল্যাণকর ও অকল্যাণকর দুটো দিকই রয়েছে। প্রযুক্তির প্রয়োগের উপর ভালো-মন্দ নির্ভর করে।
৫। বিজ্ঞান হ’ল প্রাকৃতিক এবং শারীরিক বিশ্বের কাঠামো এবং আচরণের গবেষণা, প্রাঙ্গনে তৈরি করা। অন্যদিকে, প্রযুক্তিগুলি সেই সমস্ত প্রাঙ্গনে অনুশীলনে রাখার বিষয়ে আলোচনা করে।
৬। বিজ্ঞান বিশ্লেষণ, ছাড় এবং তত্ত্ব বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, প্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং ডিজাইনের সংশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে।
৮। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতির উদ্ঘাটন। মহাবিশ্ব কী কী নিয়মের মধ্য দিয়ে চলছে সে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনই হচ্ছে বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, প্রকৌশল হচ্ছে বিজ্ঞানের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া। জানা প্রাকৃতিক নীতিমালার বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়ে মানুষের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তোলা এবং মানুষের নানা সমস্যা সমাধান করাই হচ্ছে প্রকৌশলের লক্ষ্য।
৯। বিজ্ঞানীরা বিদ্যুত্ নিয়ে গবেষণা করে তার সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিয়েছেন। তাদের দেওয়া এসব ধারণাকে কাজে লাগিয়ে রেফ্রিজারেটর,টেলিভিশন,মোবাইল, বৈদ্যুতিক বাতি ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে, যা প্রযুক্তি নামে পরিচিত।