বৈজ্ঞানিক আরোহ (Scientific Induction):
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের উপর নির্ভর করে কয়েকটা বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে একটা সাধারণ সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য স্থাপন করার পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক আরোহ বলে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ:
রহিম হয় মরণশীল।
করিম হয় মরণশীল।
∴ সকল মানুষ হয় মরণশীল।
আমরা রহিমকে মরতে দেখেছি, করিমকে মরতে দেখেছি। এখন আমরা কয়টি বিশেষ সত্যের উপর ভিত্তি করে যখন অনুমান করি ‘সকল মানুষ হয় মরণশীল’ তখন এই সার্বিক সত্যটি আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে থাকেনা। এর কিছু অংশ মরণশীলতা ছাড়া বাকি সম্পূর্ণই আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে, তা যে সত্য হবে এর নিশ্চয়তায় এবং বিশেষ থেকে সার্বিক গমনের পিছনে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ থাকা আবশ্যক। সে কারণেই আরোহ অনুমানের কাজ হচ্ছে। আবিষ্কার, বিশ্লেষণ ও প্রমাণ করা।
অবৈজ্ঞানিক আরোহ (Unscientific Induction):
সংজ্ঞা কার্যকারণ সম্বন্ধ ছাড়াই শুধু নিয়মানুবর্তিতা নীতি বা প্রতিকূল দৃষ্টান্ত বিহীন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা সার্বিক সংশ্লেষক বাক্য প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিকে অবৈজ্ঞানিক বা অপূর্ণ গণণামূলক আরোহ বলে। অর্থাৎ প্রকৃতি থেকে পাওয়া আমাদের অসংখ্য অভিজ্ঞতাই এই শ্রেণীর আরোহের মূল ভিত্তি। উদাহরণ স্বরূপঃ প্রকৃতির রাজ্যে ব্যতিক্রমহীনভাবে কত গুলো কালো কাক দেখে এবং অন্য কোন বর্ণের কাক না দেখে যদি অনুমান করা হয় যে, ‘সব কাক হয় কালো’ তবে এটি অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে। কেননা এখানে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় ছাড়াই শুধু বাস্তব অভিজ্ঞতার সাহায্যে আমরা সার্বিক বাক্যটি গঠন করেছি।
অবৈজ্ঞানিক আরোহের প্রকৃতি প্রসঙ্গে যুক্তিবিদ মিল বলেন, কোন বিষয় সম্পর্কে যে বাক্য সত্য বলে জানা যায়, তা যদি সমজাতীয় সব বিষয় সম্পর্কে সত্য হয়, তাহলে সে সত্যের ভিত্তিতে একটা সাধারণত: বাক্য প্রতিষ্টার সার্বিক উদাহরণ প্রক্রিয়াই হল অবৈজ্ঞানিক আরোহ।
বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের মধ্যে পার্থক্যঃ
প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ও কার্যকারণ নিয়মের উপর নির্ভর করে কয়েকটা বিশেষ দৃষ্টান্ত। বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক আরোহের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. বৈজ্ঞানিক আরোহে প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি এবং কার্য-কারণ নীতি এ দু’টি পরম নিয়মের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত হিসাবে সার্বিক সংশ্লেষক বাক্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে শুধু প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নীতি ব্যবহার করে সার্বিক সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত স্থাপন করা হয়।
২. বৈজ্ঞানিক আরোহে কার্য-কারণ সম্পর্ক স্থাপন করা হয় বলে এর সিদ্ধান্ত নিশ্চিত। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহের সিদ্ধান্ত কার্য-কারণের উপর ভিত্তি করে হয় না বলে এর সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য।
৩. বৈজ্ঞানিক আরোহ বিশ্লেষণের সাহায্যে গ্রহণ করা হয় বলে এই পদ্ধতিতে অপনয়নের মাধ্যমে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় গুলো বাদ দেয়া হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে বিশ্লেষণের কোন প্রচেষ্টা অবৈজ্ঞানিক আরোহে বিশ্লেষণের কোন প্রচেষ্টা থাকে না বলে এতে অপনয়নের সূত্র প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না।
৪. ̄Íর অতিμমের পার্থক ̈ ঃ বৈজ্ঞানিক আরোহের বেলায় নিরীক্ষণ, বিশ্লেষণ, অপণয়ন, প্রকল্প গঠন, সার্বিকীকরণ এবং সিদ্ধান্ত প্রণয়নের বিভিন্ন স্তরগুলো অতিক্রম করতে হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত টানতে হলে এসব স্তর অতিক্রম করতে হয় না। শুধু প্রতিকূল দৃষ্টান্তবিহীন অবাধ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এর সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
৫. বৈজ্ঞানিক আরোহে সদর্থক ও নঞর্থক উভয় প্রকার দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সার্বিক সংশ্লেষক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে শুধু সদর্থক দৃষ্টান্ত গুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
৬. বৈজ্ঞানিক আরোহ প্রকৃতিগতভাবে একটি জটিল পদ্ধতি। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহ একটি সহজ সরল পদ্ধতি।
৭. বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানে দৃষ্টান্তসমূহের প্রাসঙ্গিগতা ও অন্তরর্নিহিত গুণের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। অন্যদিকে, অবৈজ্ঞানিক আরোহে দৃষ্টান্তে সমূহের গুণগত বৈশিষ্ট্যর উপর বেশী গুরুত্ব না দিয়ে দৃষ্টান্তের সংখ্যার উপর বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়।