বীজ (Seed):
নিষেকোত্তর রূপান্তরিত ও পরিস্ফুটিত ডিম্বকই বীজ। কিছু কিছু উদ্ভিদে একে কার্নেল বলা হয়। কৃষির মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। বীজ উদ্ভিদ জগতের ধারক ও বাহক। বীজই ফসল উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বীজ আবরণী দ্বারা আবৃত থাকে এবং সাধারণত এতে পরিস্ফূটনরত ভ্রূণের জন্যে সঞ্চিত খাদ্য থাকে। বীজ আবৃতবীজী ও নগ্নবীজী উদ্ভিদে পরিপক্ব ডিম্বকের সফল নিষেক ও মাতৃগাছের অভ্যন্তরে কিছু পরিবর্ধনের ফসল। বীজ তৈরির মাধ্যমে বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার হওয়া উদ্ভিদের প্রজনন সম্পন্ন হয় , যেখানে জাইগোট থেকে ভ্রূনের সৃষ্টি হয় এবং ডিম্বাণুর বহিরাবরণ থেকে বীজত্বক সৃষ্টি হয়।
বীজ সপুষ্পক উদ্ভিদের সংখ্যাবৃদ্ধি ও বিস্তারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে আদিমতর মস ও ফার্ণের সাপেক্ষে, যারা বীজের মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধি করে না। এ ব্যাপারটিকেই সবীজ উদ্ভিদের উষ্ণ ও শীতল – দু ধরনের আবহাওয়াতেই বনভূমি থেকে শুরু করে তৃণভূমি পর্যন্ত সর্বত্রই প্রাধান্য বিস্তার করার কারণ মনে করা হয়। বীজ শব্দটি যা কিছু বপন করা হয় তা বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়, যেমন আলুর বীজ, সূর্যমুখীর বীজ ইত্যাদি। সূর্যমুখী এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে বপন করা হয় খোসায় আবৃত বীজ, আর আলুর ক্ষেত্রে বপন করা হয় টিউবার।
শস্য (Grain):
শস্য বলতে চাষাবাদযোগ্য উদ্ভিদ অথবা কৃষিজাত উৎপাদিত পণ্যকে বুঝায়। বীজ, শাকসব্জি কিংবা ফলমূল এগুলো সবই শস্যরূপে বিবেচিত। কৃষির সাথে সম্পৃক্ত কৃষক শস্য উৎপাদন করে থাকেন। উৎপাদিত শস্য কৃষিজাত পণ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একই ধরনের উৎপাদিত বৃহৎ পরিমাণের খাদ্যসম্ভার, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি তৈরীতে সহায়ক উদ্ভিদকূলকে শস্য নামে অভিহিত করা হয়। শস্য মূলতঃ অ-প্রাণীজাত প্রজাতি কিংবা বিভিন্ন উদ্ভিদজাত ফসল যা খাদ্য, গবাদিপশুর শুকনো খাদ্য, জ্বালানী কিংবা অন্য কোন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যে উৎপাদন করা হয়।
বীজ এবং শস্যর মধ্যে পার্থক্যঃ
বীজ এবং শস্য দুটি একই মনে হলেও এদের মধ্যে অনেকাংশে পার্থক্য রয়েছে। তাই বীজ এবং শস্যর মধ্যে পার্থক্য গুলো নিচে আলোচনা করার চেষ্টা করছি-
১। নিষেকোত্তর রূপান্তরিত ও পরিস্ফুটিত ডিম্বকই বীজ। কিছু কিছু উদ্ভিদে একে কার্নেল বলা হয়। কৃষির মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। অন্যদিকে, শস্য বলতে চাষাবাদযোগ্য উদ্ভিদ অথবা কৃষিজাত উৎপাদিত পণ্যকে বুঝায়।
২। বীজ এবং শস্যের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হ’ল বীজটি যৌন প্রজননের ফলে উৎপাদিত ভ্রূণ গাছ হয় এবং শস্য শস্যের এক প্রকার বীজ বা ফল যা মূলত ঘাসে দেখা যায়।
৩। বীজের তিনটি প্রধান উপাদান হ’ল ভ্রূণ, এন্ডোস্পার্ম এবং বীজ কোট। অন্যদিকে, শস্যের চারটি উপাদান হ’ল ভ্রূণ, এন্ডোস্পার্ম, বীজ কোট এবং ব্রান।
৪। শস্যের কার্যক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যদিকে, বীজের কার্যক্ষমতা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
৫। বীজকে ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। অন্যদিকে, শস্যকে ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক দিয়ে চিকিৎসা করা হয় না।
৬। বীজের উদাহরণ- কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখী বীজ এবং তিলের বীজ। অন্যদিকে, শস্যের উদাহরণ- গম, চাল, ভুট্টা এবং ওট।