স্বল্পকালীন ভােগ অপেক্ষক (Short run consumption function) :
সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে সময়ে একটি বাণিজ্য চক্র সৃষ্টি হয় সেই সময়কে স্বল্পকাল বলে। একটি বাণিজ্য চক্রকালে আয়ের সাথে ভোগের সম্পর্ক থেকে যে ভোগ অপেক্ষক পাওয়া যায়, তাকে স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে। স্বল্পকালীন ভােগ অপেক্ষক বলতে সেই ভােগ অপেক্ষককে বুঝানাে হয়, যেখানে স্বয়ম্ভূত ভােগ ব্যয়ের অস্তিত্ব আছে।
স্বল্পকালীন ভােগ অপেক্ষক হিসাবে লিনিয়ার ভােগ সমীকরণ C = a + bY বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে সমীকরণে Y =স্বাধীন চলক, C =অধীন চলক, এবং a ও b হল পরামিতি। C = ভােগব্যয়ের পরিমাণ, Y= আয়, a = স্বয়ম্ভূত ভােগ ব্যয়, যা ভােগ সমীকরণের ইন্টারসেপ্ট, b = প্রান্তিক ভােগ প্রবণতা (MPC) যা’ ভােগ সমীকরণের ঢাল।
দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক (Long run consumption function) :
সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে সময়ে একাধিক বাণিজ্য চক্র সৃষ্টি হয় সেই সময়কে দীর্ঘকাল বলে। একাধিক বাণিজ্য চক্রকারে তথা Economic Trend data থেকে ভোগের সম্পর্ক সৃষ্টি করে দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে। অর্থাৎ দীর্ঘকালীন সময়ে আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে যে কার্যকরী সম্পর্ক বিরাজ করে, তাকে দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে। এখানে দীর্ঘকাল বলতে এমন সময়কে বোঝানো হয়, যে সময় ভোগকে প্রভাবিত করে এমন সব উপাদান পরিবর্তনশীল। দীর্ঘকালে আয় ও ভোগ ব্যয়ের মধ্যে আনুপাতিক সম্পর্ক প্রকাশ পায়। এ সময়ে শূন্য আয়ে ভোগ ব্যয় শূন্য হয়।
দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষককে নিম্নরূপে প্রকাশ করা হয়- C = bY
এখানে,
C = ভোগ ব্যয়,
b = প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা
Y = আয়
b এর কাল্পনিক মান ধরে দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষককে নিম্নরূপে দেখানো যায়- C = 0.5 Y
স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষকের মধ্যে পার্থক্যঃ
মানুষের অভাব পূরনের উদ্দেশ্যে দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে যখন তাদের মধ্যস্থিত উপযোগ নিঃশেষ করা হয় তখন তাকে বলা হয় ভোগ। স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষকের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে সময়ে একটি বাণিজ্য চক্র সৃষ্টি হয় সেই সময়কে স্বল্পকাল বলে। একটি বাণিজ্য চক্রকালে আয়ের সাথে ভোগের সম্পর্ক থেকে যে ভোগ অপেক্ষক পাওয়া যায়, তাকে স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে।
অন্যদিকে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে সময়ে একাধিক বাণিজ্য চক্র সৃষ্টি হয় সেই সময়কে দীর্ঘকাল বলে। একাধিক বাণিজ্য চক্রকারে তথা Economic Trend data থেকে ভোগের সম্পর্ক সৃষ্টি করে দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক বলে।
২।স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষকে স্বয়ম্ভূত ভোগ ব্যয় থাকে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আয় শূন্য অবস্থায় ভোগ ব্যয় ধনাত্মক থাকে। অন্যদিকে, দীর্ঘকালীন · ভোগ অপেক্ষকে স্বয়ম্ভূত ভোগ ব্যয় থাকে না। অর্থাৎ আয় শূন্য হলে ভোগ ব্যয় শূন্য হয়।
৩। স্বল্পকালীন ভোগ রেখা লম্ব অক্ষে ছেদক নিয়ে উত্থিত হয়। অন্যদিকে, দীর্ঘকালীন ভোগ রেখা মূল বিন্দু থেকে উত্থিত হয়। ফলে স্বল্পকালীন MPC-র চেয়ে দীর্ঘকালীন MPC বেশি থাকে।
৪। স্বল্পকালে আয় বাড়লে APC কমে। অন্যদিকে, দীর্ঘকালে APC স্থির থাকে।
৫। দীর্ঘকালে APC=MPC এবং স্বল্পকালে APC>MPC এবং স্বল্পকালীন ভোগ রেখার ছেদক থাকে। এর ঢাল একের চেয়ে কম। তাই গড় মান যা থাকে প্রান্তিক মান তার চেয়ে কম। স্বল্পকালে APC>MPC।
৬। স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষকের সমীকর C = a + bY সংখ্যাসূচক সমীকরণ: C = 100 + 0.5Y। অন্যদিকে, দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষকের সমীকরণ হলো C = bY সংখ্যাসূচক সমীকরণ: C = 0.5Y।