সিগমা বন্ধন (Sigma Bond) :
দুটি একই বা ভিন্ন পরমাণু দুটি পারমাণবিক অরবিটাল একই অক্ষ বরাবর মুখোমুখি অধিক্রমনের ফলে আণবিক অরবিটাল সৃষ্টির মাধ্যমে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে সিগমা বন্ধন বলে। এই ক্ষেত্রে পরমাণুদ্বয় নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন শেয়ারিং এর মাধ্যমে বন্ধন গঠন করে যা সমযোজী বন্ধনের একটি বৈশিষ্ট্য । তাই সিগমা বন্ধন কে সমযোজী বন্ধন বলে। যেমন- ফ্লোরিন পরমাণুর অযুগল ইলেকট্রনধারী দুটি অরবিটাল প্রান্তিকভাবে অধিক্রমণ দ্বারা সিগমা বন্ধন গঠন করে। এ বন্ধনের অক্ষ বরাবর সর্বাধিক ইলেকট্রন ঘনত্ব সৃষ্টি করে এবং F2 অণু গঠিত হয় ।
পাই বন্ধন (Pi Bond) :
অণু গঠনের সময় দুটি পরমাণুর একই অক্ষে-অবস্থিত দুটি অরবিটাল পাশাপাশি অধিক্রমণ করলে যে বন্ধন গঠিত হয় তাকে পাই বন্ধন বলে। পাই বন্ধন (π-বন্ধন) হচ্ছে একধরনের সমযোজী রাসায়নিক বন্ধন। এর প্রতিটিতে একটি অরবিটালের দুটি লোব অন্য একটি পরমাণুর উপর একটি অরবিটালের দুটি লোবের সাথে পার্শ্বীয় অধিক্রমন করে। এই পারমাণবিক অরবিটালের প্রতিটির একটি শেয়ারকৃত নোডাল প্লেনে শূন্যের একটি ইলেকট্রন ঘনত্ব রয়েছে যা দুটি বন্ধনযুক্ত নিউক্লিয়াসের মধ্য দিয়ে যায়।
যেমন- দুটি অক্সিজেন পরমাণুর প্রত্যেকের বহিস্তরের দুটি অর্ধপূর্ণ অরবিটাল 2py ও 2pz আছে। তার মধ্যে একটি করে প্রান্তিকভাবে অধিক্রমণ করে সিগমা বন্ধন গঠন করে। অবশিষ্ট একটি করে অরবিটাল খাড়াভাবে থেকে যায়। এ দুটি p অরবিটাল পরস্পর পাশাপাশি অধিক্রমণ করে। ফলে একটি সিগমা বন্ধনের পাশাপাশি একটি পাই বন্ধন গঠিত হয়।
সিগমা এবং পাই বন্ধনের মধ্যে পার্থক্যঃ
সিগমা বন্ধন এবং পাই বন্ধন উভয়েই সমযোজী বন্ধন, কিন্তু এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। সিগমা এবং পাই বন্ধনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. অরবিটালের সরাসরি অধিক্রমনের ফলে যে বন্ধন গঠিত হয়।এক্ষেত্রে অরবিটাল সরাসরি যুদ্ধে যায়, আক্রমন করে, ইলেকট্রন শেয়ার করে সমানভাবে ভোগ করে, বন্ধন গঠিত হয়। অন্যদিকে, অরবিটারের পার্শ্ব অধিক্রমনের ফলে যে বন্ধন গঠিত হয়। এক্ষেত্রে অরবিটালদ্বয় সরাসরি সংস্পর্শ হয়না। দূরে থাকে কিন্তু আকর্ষনের ফলে বন্ধন গঠিত হয়।
২.সিগমা বন্ধন শক্তিশালী কারণ এখানে অরবিটালের সামনাসামনি অধিক্রমণ ঘটে। কিন্তু পাই বন্ধন দুর্বল কারণ এখানে অরবিটাল এর পাশাপাশি অধিক্রমন ঘটে। অন্যদিকে, সিগমা বন্ধন ভাঙতে অধিক শক্তির প্রয়োজন হয়। তাই সিগমা বন্ধন সৃষ্ট যৌগ সহজে বিক্রিয়া দেয় না। বন্ধন ভেঙ্গে প্রতিস্থাপন, অপসারণ ও পুনঃবিন্যাস বিক্রিয়া ঘটে। কিন্তু পাই বন্ধন সৃষ্ট যৌগ সক্রিয় হয়। অতি সহজে যুত বিক্রিয়া দেয়।
৩. সিগমা বন্ধন গঠিত হয় দুটি পরমাণুর দুটি s অরবিটাল বা একটি s অরবিটাল এবং একটি p অরবিটাল এর অধিক্রমণের মাধ্যমে। অন্যদিকে, পাই বন্ধন গঠিত হয় দুটি পরমাণুর দুটি p অরবিটাল এর পাশাপাশি অভিলেপনের মাধ্যমে।
৪. সিগমা বন্ধনের অধিক্রমণ রেখা দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে সংযুক্ত করে। অন্যদিকে, পাই বন্ধনের অধিক্রমণ রেখা দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে অতিক্রম করে না।
৫. সিগমা বন্ধন একটি বদ্ধ কোণ তৈরি করে। অন্যদিকে, পাই বন্ধন একটি উন্মুক্ত কোণ তৈরি করে।
৬. সিগমা বন্ধন সবচেয়ে শক্তিশালী সমযোজী বন্ধন। অন্যদিকে, পাই বন্ধন সিগমা বন্ধনের চেয়ে দুর্বল।