উপমা (Simile) :
কোনো বাক্যে স্বভাব ধর্মে ভিন্ন জাতীয় দুটি বস্তুর মধ্যে কোনো বিশেষ গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি বা ক্রিয়ার সাদৃশ্য কল্পনা করে সৌন্দর্য সৃষ্টি করলে যে অলঙ্কার হয় তাকে উপমা বলে। অর্থাৎ একটি বাক্যে সাধারণ ধর্ম বিশিষ্ট দুই বিজাতীয় পদার্থের মধ্যে সাদৃশ্য দেখানোকে উপমা বলে।
উদাহরণ- মেয়েচি লতার মতো বেড়ে উঠছে। এখানে ‘মেয়ে’ ও ‘লতা’ দুটি বিজাতীয় বস্তু। উভয়ের মধ্যে বেড়ে উঠার ব্যাপারে সাদৃশ্য আছে এবং একই বাক্যে উপাস্থাপন করা হয়েছে। সুতরাং বাক্যটি উপমা অলঙ্কার।
রূপক (Metaphor) :
বিষয়ের অপর না ঘটিয়ে (উপমেয়কে লুপ্ত না করে) তার ওপর বিষয়ীর (উপমানের) অভেদ আরোপ করলে যে অর্থসৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়, তার নাম রূপক অলংকার। খুব সহজ ভাবে মনে রাখতে উপমেয়ের ওপর উপমানের অভেদ আরোপ করলে রূপক অলংকার হবে। ব্যাকরণের ভাষায়, “রূপক” কে সাদৃশ্য বা তুলনা দেওয়া হলে “স্যাবধানিক সূচক” রূপক বলা হয়। “রূপক” একটি সাহিত্যিক ডিভাইস যা একটি বস্তুর সাথে অন্য একটি বস্তু সাদৃশ্য বা তুলনা করে। সাধারণভাবে “মত” বা “যেন” শব্দের সাথে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণস্বরূপ, “সে সহজেই গাঁধার মত ফুল ফোটালো।” এই সেটার মাধ্যমে “স্যাবধানিক সূচক” বা রূপকে উদাহরণ করা হয়, যেখানে “গাঁধার মত” বস্তুর সাথে তাকে সাদৃশ্য করে।
উপমা এবং রূপক এর মধ্যে পার্থক্যঃ
উপমা (Simile) এবং রূপক (Metaphor) দুটি সাহিত্যিক উপাদান হলেও তাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। নিচে উপমা এবং রূপক এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
১. কোনো বাক্যে স্বভাব ধর্মে ভিন্ন জাতীয় দুটি বস্তুর মধ্যে কোনো বিশেষ গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি বা ক্রিয়ার সাদৃশ্য কল্পনা করে সৌন্দর্য সৃষ্টি করলে যে অলঙ্কার হয় তাকে উপমা বলে। অন্যদিকে,
২. উপমা একটি সাদৃশ্য প্রদানের সাহিত্যিক উপাদান, যেখানে একটি বস্তুর সাথে অন্য একটি বস্তু সাদৃশ্য বা তুলনা করা হয়, সাধারণভাবে “মত” বা “যেন” শব্দের সাথে ব্যবহৃত হয়, উদাহরণস্বরূপ, “সে সবজি খায় যেন একটি গোধূলি।”
অন্যদিকে, রূপক একটি সাদৃশ্য প্রদানের সাহিত্যিক উপাদান, যেখানে একটি বস্তু অন্য একটি বস্তুর সাথে সর্বাপেক্ষা হিসেবে সাদৃশ্য করা হয়, সাধারণভাবে “হল” শব্দের সাথে ব্যবহৃত হয়, উদাহরণস্বরূপ, “সে একটি মহাশান্তি সাগর।”
৩. উপমা সাদৃশ্যের ডিগ্রি মৌলিক বস্তু এবং উপমিত বস্তু মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সাথে সীমিত থাকে। এটি যে মতবর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে তা খোঁজার জন্য “মত” বা “যেন” ব্যবহৃত হয়।
অন্যদিকে, রূপক সাদৃশ্যের ডিগ্রি মৌলিক বস্তু এবং উপমিত বস্তু মধ্যে অত্যন্ত সম্পূর্ণ সাদৃশ্য প্রদান করে, সেই কারণে এখানে যে মতবর্ণ বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে তা “হল” শব্দের সাথে ব্যবহৃত হয়।
৪. উপমা সাধারণভাবে উপযোগ করা হয় তাদের সংমিলিত বস্তুর মধ্যে একটি পূর্বাভাস বা সাদৃশ্য তৈরি করতে, যাতে পাঠক বা শ্রোতা বোঝতে পারে কি ধরণের সাদৃশ্য বা তুলনা শ্রোতা বা পাঠকের মনে আসতে পারে।
অন্যদিকে, রূপক ব্যবহার সম্পূর্ণ সাদৃশ্য প্রদান করতে একটি বৈশিষ্ট্যমুলক তুলনা তৈরি করে এবং মূল বস্তু এবং উপমিত বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য প্রদান করে, যাতে পাঠক বা শ্রোতা দুটি বস্তুর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে না।