সিভকোষ (Sivakosh):
ফ্লোয়েম টিস্যুতে অবস্থিত চালুনির মতো প্রস্থপ্রাচীরযুক্ত নলাকার কোষকে সিভনল বা সিভকোষ বলে। সিভকোষ এরা বিশেষ ধরনের কোষ। দীর্ঘ, পাতলা কোষপ্রাচীরযুক্ত ও জীবিত এ কোষগুলো লম্বালম্বি ভাবে একটির উপর একটি পরপর সজ্জিত হয়ে সিভনল গঠন করে। এ কোষ গুলো চালুনির মতো ছিদ্রযুক্ত সিভিপ্লেট দ্বারা পরস্পর থেকে আলাদা থাকে।
সিভকোষে প্রোটোপলাজম প্রাচীর ঘেঁষে থাকে। ফলে একটি কেন্দ্রীয় ফাঁপা জায়গার সৃষ্টি হয়, যা খাদ্য পরিবহনে নল হিসেবে কাজ করে। এদের প্রাচীর লিগনিন যুক্ত। পরিণত সিভকোযে কোনো কেন্দ্রিকা থাকেনা।
ভেসেল (vessel):
ভেসেল কোষগুলো খাটো চোঙের ন্যায়। কোষগুলো একটির মাথায় একটি সজ্জিত হয়ে এবং প্রান্তীয় প্রাচীর গলে একটি দীর্ঘ নলের ন্যায় অঙ্গের সৃষ্টি করে। এর ফলে কোষরসের উর্ধ্বারোহণের জন্য একটি সরু পথ সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এ কোষগুলো প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ থাকলেও পরিণত বয়সে এরা মৃত ও প্রোটোপ্লাজমবিহীন। ভেসেলের প্রাচীর ট্রাকিডের মতো বিভিন্নরূপে পুরু হয়, যেমন- সোপানাকার, সর্পিলাকার, বলয়াকার, কুপাঙ্কিত ইত্যাদি। ভেসেল সাধারণত কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা হয়। তবে বৃক্ষ বা আরোহী উদ্ভিদে আরও অধিক লম্বা হতে পারে।
এদের প্রধানত গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সব অঙ্গে দেখা যায়। নগ্নবীজী উদ্ভিদের মধ্যে উন্নত উদ্ভিদ, যেমন-নিটামে প্রাথমিক পর্যায়ের ভেসেল থাকে। পানি ও খনিজ লবণ পরিবহনে এবং অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করা এর প্রধান কাজ।
সিভকোষ ও ভেসেলের মধ্যে পার্থক্য:
ফ্লোয়েম টিস্যুতে অবস্থিত চালুনির মতো প্রস্থপ্রাচীরযুক্ত নলাকার কোষকে সিভনল বা সিভকোষ বলে। সিভকোষ ও ভেসেলের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। সিভকোষ ফ্লোয়েমের একটি সজীব কোষ। অন্যদিকে ভেসেল জাইলেমের একটি মৃত কোষ।
২। সীভ-নলে প্রন্থপ্রাচীর সীভ-প্লেপযুক্ত। অন্যদিকে ভেসেলে প্রন্থপ্রাচীর সম্পূর্ণ অবলুপ্ত।
৩। সিভকোষ শীতকালে সীভ-প্লেটের উভয় পাশে ক্যালাস প্যাড সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ভেসেলে কখনও ক্যালাস প্যাড সৃষ্টি হয় না।
৪। সিভকোষের প্রাচীর সেলুলোজ নির্মিত ও অধিক গুরুত্ববিশিষ্ট নয়। অন্যদিকে ভেসেলের প্রাচীর লিগনিফাইড এবং অধিক মাত্রায় গুরুত্ব বিশিষ্ট।
৫। সিভকোষ পাতায় তৈরি খাদ্য বর্ধিষ্ণু ও সঞ্চয়ী অঞ্চলে পরিবহন করে। অন্যদিকে ভেসেলে পানি ও দ্রবীভূত খাদ্য উপাদান পাতায় পরিবহন করে এবং উদ্ভিদকে যান্ত্রিক শক্তি প্রদান করে।