সমাজকর্ম (Social Work) :
সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ, সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সমাজকর্ম মূলত মানুষকে সাহায্য করার একটি পেশা। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা নিজস্ব সামর্থ্য ও সম্পদের ব্যবহারের মাধমে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সমাজকর্মের অস্তিত্ব এবং সমাজকর্মের কর্মকান্ড এক সামাজিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিচালিত হয়। মূলত এ জন্যই সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান পরষ্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে যাতে করে তারা সাহায্যার্থীর কল্যাণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
পৌরনীতি (Civics) :
পৌরনীতি ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Civics’ শব্দটি এসেছে দুটি লাতিন শব্দ ‘Civics’ ও ‘Civitas’ থেকে। এদের অর্থ যথাক্রমে নাগরিক ও নগররাষ্ট্র। তাই পৌরনীতির অর্থ নগররাষ্ট্রের নাগরিকদের উত্তম উপায়ে শাসন করা। অপর পক্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Political Science’ শব্দটি এসেছে দুটি গ্রিক শব্দ Polities ও Polis থেকে। এদের ও নগররাষ্ট্রের শাসন প্রণালী সম্পর্কে আলোচনা। তাই অর্থগত দিক থেকে এর পরস্পর অভিন্ন। পৌরনীতির আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে পড়ে নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য, জাতি ও জাতীয়তা, আইন, স্বাধীনতা, সাম্য, রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান প্রভৃতি।
Oxford Advance Learners Dictionary তে বলা হয়েছে, পৌরনীতি এমন একটি বিষয় যা কোনো রাষ্ট্রের নাগরিক বা সমাজের সদস্য হিসেবে তাদের অধিকার ও দায়িত্বের ব্যাপারে সরকার কী কাজ করে বা ব্যবস্থা নেয় তা আলোচনা করে।
অতএব, যে শাস্ত্র রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য এবং রাষ্ট্রের কার্যাবলী বিশদভাবে আলোচনা করে তাকে পৌরনীতি বলে।
সুশাসন (Good Governance) :
বর্তমান বিশ্বের একটি সর্বাধিক আলোচিত বিষয় সুশাসন, যার মাধ্যমে জানা যায় জনগণ কীভাবে শাসিত হবে এবং তাদের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হবে। রাষ্ট্র ও সরকারের এবং সরকার ও জনগণের সম্পর্ক কেমন হবে সুশাসন প্রত্যয়টি তাও আলোচনা করে । শাসন এর পূর্বে সু-প্রত্যয় সংযোগে সুশাসন শব্দটি গঠিত হয়েছে। এর অর্থ হলো নির্ভুল, দক্ষ ও ফলপ্রসূভাবে শাসন করা। আইনের শাসন হচ্ছে সুশাসনের অন্যতম উপাদান। সাধারণভাবে বলা যায়, যে শাসন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, অবাধ তথ্য প্রবাহ, জনগণকে উন্নত সেবাদান, কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা ও সাম্য বিরাজ করে তাই সুশাসন।
বিশ্বব্যাংক এর মতে, সুশাসন গঠিত হয় রাজনৈতিক জবাবদিহিতা, নিয়মিত নির্বাচন, শাসন ব্যবস্থায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সুব্যবস্থাপনা, পেশাগত গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, তথ্যের স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা, সুদক্ষ ও ফলপ্রসূ প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং সুশীলসমাজ ও সরকারের সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করার মধ্য দিয়ে।
সমাজকর্ম এবং পৌরনীতি ও সুশাসনের মধ্যে পার্থক্যঃ
সমাজকর্ম এবং পৌরনীতি ও সুশাসন ভিন্ন প্রকৃতির মনে হলেও জনকল্যাণে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আবার উভয়ের সাথে কিছু পার্থক্য লক্ষণীয়। তা নিম্নরূপ-
১। সমাজকর্মের অস্তিত্ব এবং সমাজকর্মের কর্মকান্ড এক সামাজিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য পৌরনীতি ও সুশাসন অধ্যয়নের গুরুত্ব অপরিসীম।
২। পৌরনীতি ও সুশাসন একটি তত্ত্ব নির্ভর মৌলিক সামাজিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান।
৩। সমাজকর্মের পরিধি পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি অপেক্ষা বিস্তৃত।
৪। সমাজকর্ম পৌরনীতি ও সুশাসনকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচেনা করে। অন্যদিকে, পৌরনীতি ও সুশাসন এর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিচার করা যায়।
৫। পৌরনীতি ও সুশাসন সমাজকর্ম সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ করে। অন্যদিকে, সমাজকর্ম তা সমাজসেবায় রূপান্তরিত করে।
৬। পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্র ও নাগরিকদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সরকার গঠন ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, সমাজকর্ম বিভিন্ন সেবা কার্মসূচীর মাধ্যমে মানুষের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৭। পৌরনীতি ও সুশাসনে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়াবলী এবং এর সাথে সাথে সরকারের নানামুখী কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করা হয়, যার লক্ষ্য জনকল্যাণ নিশ্চিত করা। অন্যদিকে, সমাজকর্মও তার বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে জনসাধারণের কল্যাণ অর্জনে প্রয়াসী।