সমাজকর্ম (Social Work):
সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ, সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সমাজকর্ম মূলত মানুষকে সাহায্য করার একটি পেশা। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা নিজস্ব সামর্থ্য ও সম্পদের ব্যবহারের মাধমে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সমাজকর্মের অস্তিত্ব এবং সমাজকর্মের কর্মকান্ড এক সামাজিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিচালিত হয়। মূলত এ জন্যই সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান পরষ্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে যাতে করে তারা সাহায্যার্থীর কল্যাণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।
জনবিজ্ঞান (Demography):
বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) উপাত্ত অনুযায়ী ১৬ কোটি ৫৭ লাখ। এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১১১৬ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী (০–২৫ বছর বয়সীরা মোট জনসংখ্যার ৬০%, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মাত্র ৬%)। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর।জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি।
বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশদ্ভুত, অথবা বিভিন্ন উপজাতির সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের উপজাতি গুলোর মধ্যে গারো ও সাঁওতাল উল্লেখযোগ্য। দেশের ৯৮% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। সরকারী কাজ কর্মে ইংরেজিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ১৯৮৭ সাল হতে কেবল বৈদেশিক যোগাযোগ ছাড়া অন্যান্য সরকারি কর্মকান্ডে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম (৯০.৪%)।এরপরেই রয়েছে হিন্দু ধর্ম(৮.৫%), বৌদ্ধ (০.৬%), খ্রীস্টান (০.৩%) এবং অন্যান্য (০.১%)।’মোট জনগোষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৮.৬% গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী। সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে দারিদ্র বিমোচন ও জনসাস্থ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে।
সমাজকর্ম ও জনবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ
সমাজকর্ম ও জনবিজ্ঞানের মধ্যেকার সম্পর্ক গভীর। জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তরের জন্য এবং সমাজের কল্যাণের কাজে ব্যবহার করার জন্যই জনবিজ্ঞানের আবির্ভাব ঘটেছে। সমাজকর্ম ও জনবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে। অন্যদিকে, জনবিজ্ঞান হলো জনসংখ্যা সংক্রান্ত একটি বিষয় যেখানে জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ এবং জন স্থানান্তর সংক্রান্ত তত্ত্ব ও তথ্য পর্যালোচনা করা হয়।
২. জনবিজ্ঞান জনসংখ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করে। অন্যদিকে, সমাজকর্ম একটি অনুশীলনধর্মী ব্যবহারিক বিজ্ঞান। সমাজকর্মের মূল আলোচ্য বিষয় মানুষ, সমস্যা ও সমাধান।
৩. জনবিজ্ঞানের তুলনায় সমাজকর্মের পরিধি ব্যাপক। জনবিজ্ঞান মানুষের গঠন, আকৃতি-প্রকৃতি প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, সমাজকর্ম মানুষের সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করে।
৪. সমাজকর্ম সমস্যা বিশ্লেষণে বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। অন্যদিকে, জনবিজ্ঞান এ ক্ষেত্রে বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ নাও করতে পারে।
৫. সমাজকর্মের মূল আলোচ্য বিষয় মানুষ, সমস্যা ও সমাধান। অন্যদিকে, মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্মীদের জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য জনবিজ্ঞান পাঠের কোনো বিকল্প নেই । বিধায় এ দু’টি বিষয় গভীর সম্পর্কে সম্পর্কিত ।