সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য

সমাজকর্ম (Social Work) :
সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ, সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সমাজকর্ম মূলত মানুষকে সাহায্য করার একটি পেশা। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা নিজস্ব সামর্থ্য ও সম্পদের ব্যবহারের মাধমে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সমাজকর্মের অস্তিত্ব এবং সমাজকর্মের কর্মকান্ড এক সামাজিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিচালিত হয়। মূলত এ জন্যই সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান পরষ্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে যাতে করে তারা সাহায্যার্থীর কল্যাণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

মনোবিজ্ঞান (Psychology) :
মনোবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Psychology যা Psyche এবং Logos শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত। Psyche এবং Logos এর পর্যায়ক্রমিক অর্থ হলো মন বা আত্মা এবং বিজ্ঞান বা জ্ঞান। অর্থাৎ মনোবিজ্ঞান হলো মন বা আত্মা সম্পর্কিত বিজ্ঞান। এছাড়াও মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত। বিভিন্ন পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর বিভিন্ন রূপ, আচরণ ও বিভিন্ন আচরণের কারণ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি হলো মনোবিজ্ঞানের মূল আলোচ্য বিষয়।

মনোবিজ্ঞানী ওয়াইসন এর মতে, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

ক্রাইডার ও অন্যান্য আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মনোজ্ঞিান হলো আচরণ ও মানসিক প্রক্রিয়াসমূহের বিজ্ঞানসম্মত পর্যালোচনা।

মনোবিজ্ঞানী প্যাভলভ এর মতে, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে দৃষ্টিগোচর আচরণের পর্যালোচনা। সুতরাং বলা যায়, যে বিজ্ঞান মানবিক ও শারীরিক ক্রিয়ার পারস্পারিক সম্পর্ক বিশেষ করে, যা ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে তার অনুধ্যান করে তাকে মনোবিজ্ঞান বলে।

সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ
সমাজকর্ম ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে যেমন ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। তেমনি উভয়ের মধ্যে কতগুলো বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়। তা নিম্নরূপ-

১। সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ, সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়।

অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান হচ্ছে দৃষ্টিগোচর আচরণের পর্যালোচনা। সুতরাং বলা যায়, যে বিজ্ঞান মানবিক ও শারীরিক ক্রিয়ার পারস্পারিক সম্পর্ক বিশেষ করে, যা ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করে তার অনুধ্যান করে তাকে মনোবিজ্ঞান বলে।

২। একটি সাহায্যকারী পেশা হিসেবে সমাজকর্মের কিছু নিজস্ব মূল্যবোধ ও নীতিমালা রয়েছে। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞানে সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার তেমন প্রভাব লক্ষ্যণীয় নয়।
৩। সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বা অনুশীলনধর্মী বিজ্ঞান। অন্যদিকে, মনোবিজ্ঞান মৌলিক বিজ্ঞান।

৪। মনোবিজ্ঞান মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। অন্যদিকে, সমাজকর্ম অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের আচরণ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করে।

৫। মনোবিজ্ঞানের জ্ঞানের উপর সমাজকর্ম নির্ভরশীল। অন্যদিকে, সমাজকর্মের জ্ঞানের উপর মনোবিজ্ঞান ততোটা নির্ভরশীল নয়।

৬। মনোবিজ্ঞানের নিজস্ব তত্ত্ব রয়েছে। অন্যদিকে, সমাজকর্মের সেই অর্থে নিজস্ব কোনো তত্ত্ব নেই, যদিও তত্ত্বীয় কাঠামো রয়েছে।