সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য

সমাজকর্ম (Social Work):

সমাজকর্ম বলতে এমন একটি প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার সমাজসেবামূলক কর্মতৎপরতাকে বুঝায়, যা ব্যক্তি, দল, সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সম্পদ, সামর্থ্য ও বুদ্ধিমত্তার দ্বারা নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। সমাজকর্ম মূলত মানুষকে সাহায্য করার একটি পেশা। এটি ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে তারা নিজস্ব সামর্থ্য ও সম্পদের ব্যবহারের মাধমে নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে পারে।

এখানে উল্লেখ্য যে, সমাজকর্মের অস্তিত্ব এবং সমাজকর্মের কর্মকান্ড এক সামাজিক ব্যবস্থার ভিতর থেকেই পরিচালিত হয়। মূলত এ জন্যই সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞান পরষ্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সমাজকর্মীকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়তা করে যাতে করে তারা সাহায্যার্থীর কল্যাণে কার্যকরভাবে ভূমিকা রাখতে পারে।

সমাজবিজ্ঞান(Sociology):

সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শাস্ত্র। এতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনের সামাজিক দিক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমাজ বিষয়ক গবেষণা অতীত কাল থেকেই প্রচলিত ছিল। তবে অগাস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম ১৮৩৮ সালে এর রীতিবদ্ধ আলোচনা করেন। এছাড়া হার্বার্ট স্পেনসার সমাজবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের মূল স্থপতি হিসেবে ফরাসি পণ্ডিত এমিল ডুর্খেইম এবং জার্মান সমাজবিজ্ঞানী মাক্স ওয়েভারের নাম উল্লেখযোগ্য। তবে ইবনে খালদুন কে সমাজবিজ্ঞান এর আদি বা প্রাচীন জনক মনে করা হয়। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। ডুর্খেইমের মতে, সমাজবিজ্ঞান হলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।

Ginsberg এর মতে, সমাজবিজ্ঞান মানুষের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ও আন্তঃসম্পর্কের শর্ত ও ফলাফল সম্পর্কিত অধ্যয়ন।

Max Weber এর মতে, সমাজবিজ্ঞান হলো ঐ বিজ্ঞান যা সামাজিক মানুষকে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করে।

সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ

সমাজকর্ম ও সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক শুধু ঘনিষ্টই নয় বরং পারস্পারিক নির্ভরশীলও বটে। উভয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু মৌলিক পার্থক্যও বিদ্যমান। আর তা হলো-

১। সমাজবিজ্ঞান একটি মৌলিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, সমাজকর্ম সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে জ্ঞান আহরণ করে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ সমাজকর্ম হলো একটি সমন্বিত বিজ্ঞান।

২। পরিধিগত দিকেও পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক, কিন্তু সমাজকর্মের পরিধি অপেক্ষাকৃত কম।

৩। সমাজবিজ্ঞান একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান। অন্যদিকে, সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান।

৪। সমাজবিজ্ঞান তাত্ত্বিক বিজ্ঞান হওয়ার কারণে এটি নিজস্ব গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, সমাজকর্ম নতুন জ্ঞান সৃষ্টির পাশাপাশি অর্জিত জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত হয়।

৫। সমাজকর্মীদের জন্য সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান অপরিহার্য। অন্যদিকে, সমাজবিজ্ঞানীদের জন্য সমাজকর্মের জ্ঞান প্রয়োজন হলেও অপরিহার্য নয়।

৬। সমাজকর্ম দর্শন ও সমাজবিজ্ঞান দর্শন কল্যাণমুখী চিন্তাধারায় এক নয়।