সমাজবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য

সমাজবিজ্ঞান(Sociology):
সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শাস্ত্র। এতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনের সামাজিক দিক এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমাজ বিষয়ক গবেষণা অতীত কাল থেকেই প্রচলিত ছিল। তবে অগাস্ট কোঁৎ সর্বপ্রথম ১৮৩৮ সালে এর রীতিবদ্ধ আলোচনা করেন। এছাড়া হার্বার্ট স্পেনসার সমাজবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের মূল স্থপতি হিসেবে ফরাসি পণ্ডিত এমিল ডুর্খেইম এবং জার্মান সমাজবিজ্ঞানী মাক্স ওয়েভারের নাম উল্লেখযোগ্য। তবে ইবনে খালদুন কে সমাজবিজ্ঞান এর আদি বা প্রাচীন জনক মনে করা হয়।

Ginsberg এর মতে, সমাজবিজ্ঞান মানুষের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া ও আন্তঃসম্পর্কের শর্ত ও ফলাফল সম্পর্কিত অধ্যয়ন।
Max Weber এর মতে, সমাজবিজ্ঞান হলো ঐ বিজ্ঞান যা সামাজিক মানুষকে বিশদভাবে জানার চেষ্টা করে।

সামাজিক বিজ্ঞান (Social Science):
সমাজবদ্ধভাবে জীবন যাপন করার জন্য মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন, চাহিদা ও আদান-প্রদানে নানা সমস্যা প্রভৃতির বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করা Social Science বা সামাজিক বিজ্ঞানের লক্ষ্য। সামাজিক বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের এমন একটি শাখা যা সমাজ ও মানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে। সামাজিক বিজ্ঞানকে সাধারণত জ্ঞানের একটি বৃহত্তর ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা যার মধ্যে রয়েছে নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, অপরাধ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, মানবিক ভূগোল, মনোবিজ্ঞান। আইন, পরিবেশ বিজ্ঞান, সমাজকর্ম ও তুলনামূলক-সংস্কৃতি অধ্যয়ন এর মতো বিষয়গুলোও কখনো কখনো সামাজিক বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয়।

সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোৎ, তিনি বলেন, “Sociology is the scientific study of the society” অর্থাৎ, সমাজবিজ্ঞান হলো সমাজকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অধ্যায়নের বিজ্ঞান। অগাস্ট কোৎ সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রে বিশেষ অবদান রাখেন, যার জন্য অগাস্ট কোৎ কে সমাজবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তিনিই Sociology (বাংলা অর্থ হচ্ছে সমাজবিজ্ঞান) শব্দটি প্রবর্তন করে সমাজবিজ্ঞানকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করেন।

সমাজবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্যঃ

অনেকেই সমাজবিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানকে একই বিষয় মনে করে থাকেন, তাদের ধারণা ভূল। বিষয় দুটি এক নয়, এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তা নিম্নরূপ-

১. সমাজবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ Sociology. Sociology শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Socious এবং গ্রীক Logos এর সমন্বয়ে। Socious শব্দের অর্থ সমাজ এবং Logos শব্দের অর্থ জ্ঞান। সুতরাং, Sociology শব্দের অর্থ সমাজের জ্ঞান। অন্যদিকে, এই সমাজ তথা সমাজিক বিষয়াদির বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা ও ব্যাখ্যা বিচার-বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন শুরু হয়েছে যখন থেকে তখন থেকেই উৎপত্তি সামাজিক বিজ্ঞানের।

২. সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিদ্যা বা সমাজতত্ত্ব মানুষের সমাজ বা দলের বৈজ্ঞানিক আলোচনা শাস্ত্র। অন্যদিকে, সমাজবদ্ধভাবে জীবন যাপন করার জন্য মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন, চাহিদা ও আদান-প্রদানে নানা সমস্যা প্রভৃতির বিজ্ঞানসম্মত সমাধান করে মানব জাতির কল্যাণ সাধন করা Social Science বা সামাজিক বিজ্ঞানের লক্ষ্য।

৩. সমাজবিজ্ঞান সমাজে বসবাসরত ব্যক্তিদের সামাজিক আচরণ ও সম্পর্ক নিয়ে বিজ্ঞান ভিক্তিক আলোচনা করে থাকে। অন্যদিকে, সামাজিক বিজ্ঞান সমাজের সাথে জড়িত অন্য সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। অর্থাৎ সামাজিক বিজ্ঞান হচ্ছে জ্ঞানের এমন একটি শাখা যা সমাজ ও মানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।

৪. সমাজবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে সমাজ, সমাজকাঠামো ও মানব সম্পর্ক। অন্যদিকে, সামাজিক বিজ্ঞানকে সাধারণত জ্ঞানের একটি বৃহত্তর ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা যার মধ্যে রয়েছে নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, অপরাধ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিক্ষা, ইতিহাস, ভাষাবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, মানবিক ভূগোল, মনোবিজ্ঞান।

৫. সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতি উভয়ই সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ। অন্যদিকে, ভূমি, রাজস্ব, ভূমিনীতি, করনীতি প্রভৃতি বিষয়ের সামাজিক তাৎপর্য সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।