মৃত্তিকা দ্রবণের (pH) পিএইচ দ্বারা মৃত্তিকা অম্লত্ব জানা যায়। মৃত্তিকা অম্লত্ব ও মৃত্তিকা ক্ষারত্ব দুটি বিভিন্ন গুণাত্মক ধারণা নিয়ে তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। মৃত্তিকা অম্লত্ব ও মৃত্তিকা ক্ষারত্বের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
মৃত্তিকা অম্লত্ব (Soil Acidity) :
মৃত্তিকা দ্রবণের (pH) পিএইচ দ্বারা মৃত্তিকা অম্লত্ব জানা যায়। মৃত্তিকা অম্লীয় হলে তখন মৃত্তিকা পিএইচ (pH) এর মান ৭ এর কম হবে। হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব বা গাঢ়ত্ব দ্বারা পিএইচ সনাক্ত করা যায়। মৃত্তিকার (pH) পিএইচ কে মৃত্তিকা বিক্রিয়াও বলা হয়। সুতরাং মৃত্তিকা পিএইচ হলো হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের (H^+) ঋণাত্মক লগারিদম। মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়ন ঘনত্বের (H^+) পরিমাণ বেশি হলে তাকে অম্লীয় মৃত্তিকা বলে। মৃত্তিকা পিএইচ (pH) হলো মৃত্তিকা দ্রবনের হাইড্রোজেন আয়ন ঘণত্বের বিপরীত রাশির লগারিদম। অর্থাৎ pH = Log ১/ [H^+] । হাইড্রোজেন আয়ন ঘণত্বের বা গাঢ়ত্বের একক হলো গ্রাম/লিটার তবে pH এর কোন একক নেই। মৃত্তিকার pH দ্বারা মৃত্তিকার অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব নির্দেশ করে। হাইড্রোজেন আয়নের [H^+] সক্রিয়তাই মৃত্তিকা অম্লত্বের জন্য দায়ী।
মৃত্তিকা ক্ষারত্ব (Soil Alkalinity) :
কোন মৃত্তিকা দ্রবণে যদি হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH^-) গাঢ়ত্ব বেশি হয় তাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে। তুষারপাতের সময় যদি তুষারের সাথে সিলিকেট, অ্যালুমিনোসিলিকেট, Na+, Ca2+, Mg2+, K+এর কার্বোনেট যৌগ মাটির pH বৃদ্ধি করে। মাটিতে নানা ধরনের ক্ষার জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ যেমন চুন, সিলিকেট ইত্যাদি যুক্ত করলে মাটি ক্ষারীয় হয়ে ওঠে। বাইকার্বোনেটের দ্রবণ মাটিতে যুক্ত করলে মাটি ক্ষারীয় হয়। পানি সঠিক পরিমাণে প্রবাহিত না হলে মাটি শুষ্ক হয় ফলস্বরূপ মাটির ক্ষারকত্ব বৃদ্ধি পায়। মৃত্তিকা ক্ষারত্ব কমানোর জন্য ছাই জিপসাম ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হয়। মৃত্তিকা ক্ষারত্বে বার্লি-খেজুর নারিকেল ইত্যাদি ফসল ভাল জন্মে।
মৃত্তিকা অম্লত্ব ও মৃত্তিকা ক্ষারত্বের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. কোন মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের (H^+) পরিমাণ বেশি হলে তাকে অম্লীয় মৃত্তিকা বলে। অন্যদিকে, কোন মৃত্তিকা দ্রবণে যদি হাইড্রোক্সিল আয়নের (OH^-) গাঢ়ত্ব বেশি হয় তাকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা বলে।
২. মৃত্তিকা অম্লত্বে মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন (H^+) আয়নের পরিমাণ বেশি থাকে। অন্যদিকে, মৃত্তিকা ক্ষারত্বে মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোক্সিল (OH^-) আয়নের পরিমাণ বেশি থাকে।
৩. মৃত্তিকা অম্লত্বে পিএইচ (pH) মান ৭ এর কম। অন্যদিকে, মৃত্তিকা ক্ষারত্বেপিএইচ (pH) মান ৭ এর বেশি
৪. পিএইচ (pH) মান বাড়ার সাথে সাথে অম্লত্ব কমতে থাকে। অন্যদিকে, পিএইচ (pH) মান বাড়ার সাথে সাথে ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৫. মৃত্তিকা অম্লত্বে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি থাকে না। অন্যদিকে, মৃত্তিকা ক্ষারত্বে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি থাকে।
৬. মৃত্তিকা অম্লত্ব কমানোর জন্য চুন প্রয়োগ করতে হয়। অন্যদিকে, মৃত্তিকা ক্ষারত্ব কমানোর জন্য ছাই জিপসাম ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হয়।
৭. মৃত্তিকা অম্লত্বে চা-কফি, ব্লুবেরী ইত্যাদি ফসল ভাল জন্মে। অন্যদিকে, মৃত্তিকা ক্ষারত্বে বার্লি-খেজুর নারিকেল ইত্যাদি ফসল ভাল জন্মে।