একমালিকানা কারবারে স্বাধীনতা বেশি থাকলেও, অংশীদারি কারবারে দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও ভাগাভাগির সুবিধা থাকে। একমালিকানা ও অংশীদারি কারবারের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে পার্থক্য। নিচে একমালিকানা ও অংশীদারি কারবারের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
একমালিকানা কারবার (Sole proprietorship business) :
পৃথিবীর প্রাচীনতম ও সহজ প্রকৃতির ব্যবসায় সংগঠন হিসেবে একমালিকানা ব্যবসায় পরিচিত। একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন, স্বল্প মূলধন, সীমিত আয়তন এবং মালিক কর্তৃক পরিচালিত হয় একমালিকানা ব্যবসা। একমালিকানাধীন ব্যবসা এবং মালিক দুটি আলাদা স্বত্বা নয় বরং ব্যবসার সকল দায় দেনা এবং সম্পদ সমস্তই মালিকের একার। ব্যবসায়ের সমস্ত লাভ-ক্ষতি মালিক একাই ভোগ করেন । এক মালিকানাধীন ব্যবসার মালিক ইচ্ছে করলে তার নিজের বা ব্যবসায়িক নামে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। ব্যবসায় সমস্ত দায় মালিকের বলে অর্থ লগ্নিকারীরা সহজেই অর্থ লগ্নি করতে আগ্রহী হয়। তবে একমালিকানা ব্যবসায় কিছু অসুবিধা রয়েছে, মালিক নিজেই সমস্ত ঝুকি, দায়, বহন করে। অসীম ব্যবসায় হওয়ায় সকল দায় মালিক এর উপর একা বর্তায়।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে আমরা দেখি, ব্যবসায় শুরুর প্রাথমিক পর্যায় থেকেই একমালিকানা ব্যবসায় যাত্রা শুরু করে আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বেও জনপ্রিয়তার সাথে সফলভাবে টিকে আছে। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নতিতে একমালিকানা সংগঠন ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে পারছে।
অংশীদারি কারবার (Partnership business) :
চুক্তির মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যখন মুনাফা অর্জন এর আশায় বৈধভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তাকে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। এই কারবার এ সর্বনিম্ন দুইজন এবং সর্বোচ্চ ২০জন সম্মিলিত হতে পারবে। অংশীদারি কারবার এর মূলধন যোগান দেয় অংশীদারা নিজে । কে কত টুকু মূলধন যোগান দিবে তা নিজেদের সম্পাদিত চুক্তির মধ্যে উল্লেখিত থাকে। চুক্তি অনুযায়ী লাভ-লোকসানের ভাগ সকল অংশীদারদের মাঝে বন্টন হবে। অংশীদারি ব্যবসায়ের দেনার জন্য প্রত্যেক অংশীদার ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে দায়ী থাকে। একাধিক ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত বলে একমালিকানা ব্যবসায়ের চেয়ে এ কারবারের পুঁজি বেশি হয় এবং তাদের একক ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ ব্যবসায়ে অধিক পরিমাণ ঋণ গ্রহণের সুযোগ বিদ্যমান। এমনকি এ ব্যবসায়ে অংশীদারগণ বিশেষ প্রয়োজনে ও তাদের মালিকানাস্বত্ব অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করতে পারে না
একমালিকানা ও অংশীদারি কারবারের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. একমালিকানা কারবারের মালিক একজন মাত্র ব্যাক্তি । অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের একাধিক মালিক বা সদস্য থাকে।
২. একমালিকানা কারবারে মূলধন সাধারণত কম হয় । অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় এই ব্যবসায়ের মূলধন সাধারণত বেশি হয় ।
৩. একমালিকানা কারবারের মূলধন কম হওয়ায় এরূপ ব্যবসায় সাধারণত ক্ষুদ্র প্রকৃতিতে গড়ে উঠে। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের প্রকৃতি বড় হয়। আয়তন বিচারে এটি
মাঝারি আয়তনের ব্যবসায় সংগঠন।
৪. একমালিকানা কারবারের ক্ষেত্রে মালিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক ক্ষমতার অধিকারী। তাই দ্রুত সিদ্ধন্ত গ্রহণ করা যায়। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে সকল অংশীদারের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় । বিধায় অনেক ক্ষেত্রোই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হয়।
৫. একমালিকানা কারবারের ধরনের ব্যবসায়ে পরিচালনার মূল দায়িত্ব একক মালিকের উপর ন্যস্ত। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে সকল অংশীদার ব্যবসায় পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকারী । তবে তাদের পক্ষে যে কেউ তা পরিচালনা করতে পারে।
৬. একমালিকানা ব্যবসায়ের সমস্ত লাভ মালিক একাই ভোগ করে এবং লোকসান একাই বহন করে। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে লাভ-লোকসান চুক্তি অনুযায়ী অন্যথায় সমান হারে অংশীদারদের মধ্যে বন্টন হয়।
৭. একমালিকানা কারবার ক্ষেত্রে মালিক একজন বিধায় তার পক্ষে অন্য কেউ প্রতিনিধি বিবেচিত হয় না। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে প্রত্যেক অংশীদার একে অন্যের প্রতিনিধি বিবেচিত হয়।
৮. একমালিকানা কারবার ক্ষেত্রে মালিকের ব্যক্তি-স্বাধীনতা সর্বাধিক। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে অংশীদারদের ব্যক্তি-স্বাধীনতা তুলনামূলক বিচারে কম হয়।
৯. একমালিকানা কারবার সাংগঠনিক দক্ষতার বিচারে এরূপ সংগটন অধিক দক্ষ বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে নানান জটিলতার কারণে সংগঠন অধিক দক্ষ হতে পারে না।
১০. একমালিকানা কারবার একক মালিকের আর্থিক ও ব্যক্তিগত সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে এতে সম্প্রসারণের সুযোগ কম থাকে। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে সদস্য বেশি হওয়ার এবং প্রয়োজনে সর্বোচ্চসীমা সংখ্যক সদস্য নেয়ার সুযোগ থাকায় সম্প্রসারণের সুযোগ বেশি হয়।
১১. একমালিকানা কারবার ধরনের ব্যবসায় নিবন্ধনের কোন প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ইচ্ছা করলে এ ধরনের ব্যবসায় নিবন্ধন করা যায়।
১২. একমালিকানা কারবারের জন্য পৃথক কোন আইন নেই। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন এ দেশে এ ব্যবসায়ের জন্য বিশেষভাবে প্রণীত আইন।
১৩. একমালিকানা ব্যবসায়ে সহজেই পরিবর্তিত অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে চলা যায়। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের তুলনামূলম বিচারে এ ক্ষেত্রে নমনীয়তার সুযোগ কম থাকে।
১৪. একমালিকানা কারবারের মালিক একজন হওয়ায় এক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝির কোনো প্রশ্ন আসে না। অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের ক্ষেত্রে অংশীদারদের মধ্যে নানান কারণেই ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে।
১৫. একমালিকানা কারবারের গঠন ও বিলোপ উভয়ই সহজ । অন্যদিকে, অংশীদারি কারবারের গঠন ও বিলোপের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা পালনের প্রয়োজন পড়ে।