ধ্বনি(sound):
মানুষ বাগযন্ত্রের সাহায্যে যা উচ্চারণ করে তা-ই ধ্বনি (Sound)। বাগযন্ত্রের সাহায্যে নানা রকমের ধ্বনি সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু এসব ভাষার ধ্বনি নয়। ভাষার ধ্বনি বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় এবং তা অর্থপূর্ণ (meaningful)। ভাষার মূলগত উপাদান হল ধ্বনি। মানুষ তার মনের ভাবকে কিছু সাংকেতিক আওয়াজের সাহায্যে প্রকাশ করে। এই সাংকেতিক আওয়াজগুলি বিভিন্ন সমন্বয়ে মিলিত হয়ে অর্থবহ সমষ্টি গড়ে তোলে। ভাষায় ব্যবহৃত ঐ আওয়াজগুলি সৃষ্টি হয় মানুষের বাগ্যন্ত্রে। এই আওয়াজগুলি ব্যাকরণে ধ্বনি নামে পরিচিত। সাধারণ ব্যবহারিক জীবনে যে কোনো আওয়াজকেই ধ্বনি বলে। কিন্তু ব্যাকরণে ধ্বনি কাকে বলে? “ভাব প্রকাশের উদ্দেশ্যে মানুষের বাগযন্ত্র থেকে নিঃসৃত সাংকেতিক আওয়াজকে ধ্বনি বলে।” মনে রাখতে হবে ভাষার ধ্বনি তখনই সার্থক হয় যখন তা একক ভাবে বা ধ্বনিগুচ্ছ আকারে কোনো ভাব বা সংকেত বহন করে।
ধ্বনি লেখার জন্য যেসব প্রতীক বা সংকেত (symbol)ব্যবহার করা হয় সেগুলিই বর্ণ (Alphabet)। ধ্বনি মানুষের মুখনিঃসৃত বায়ু থেকে সৃষ্ট, তাই এর কোনো আকার নেই। এগুলো মানুষ মুখে উচ্চারণ করে এবং কানে শোনে। ভাষা লিখে প্রকাশ করার সুবিধার্থে ধ্বনিগুলোর প্রতিনিধি হিসেবে কিছু প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতীকের নাম বর্ণ। এই বর্ণসমূহের সমষ্টিই হলো বর্ণমালা।
ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্যঃ
ধ্বনি ও বর্ণ বলতে অনেকে একই জিনিস বোঝেন। আসলে কিন্তু তা নয়। ধ্বনি ও বর্ণ পরস্পরের পরিপূরক, কিন্তু অভিন্ন নয়। নিচে আমরা ধ্বনি বর্ণের পার্থক্যগুলি দেখানো হলো-
১। ধ্বনি হলো ভাষার মূল উপাদান আর বর্ণ হলো ধ্বনি নির্দেশক প্রতিক বা চিহ্ন।
২। ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগ্যন্ত্রে। অন্যদিকে বর্ণকে অঙ্কন করা হয়।
৩। ধ্বনি এক ধরনের আওয়াজ-সংকেত। অন্যদিকে বর্ণ এক ধরনের চিত্র-সংকেত।
৪। ধ্বনি ক্ষণস্থায়ী। অন্যদিকে বর্ণ দীর্ঘস্থায়ী।
৫। ধ্বনি হল ভাষার প্রাথমিক উপাদান। অন্যদিকে বর্ণ হল ভাষার একটি বিকল্প উপাদান।
৬। ধ্বনির ভাব প্রকাশ ক্ষমতা অনেক বেশি। অন্যদিকে বর্ণের ভাব প্রকাশ ক্ষমতা ধ্বনির চেয়ে কম।
৭। ধ্বনি কানে শোনা যায়। অন্যদিকে বর্ণকে চোখে দেখা যায়।