Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য

রাষ্ট্র ও সমাজের

রাষ্ট্র (State):

রাষ্ট্র বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।

ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাববিস্তারী সঙ্গানুযায়ী রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইনানুগ বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী, নাগরিক, সমাজ, আমলাতন্ত্র, আদালত এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সমাজ (Society):

মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে গিয়ে সমাজ সৃষ্টি করেছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনেই সমাজের সৃষ্টি করেছে। সেজন্য সমাজে বাস করতে হলে মানুষকে সামাজিক নিয়ম-কানুন রীতিনীতি মেনে চলতে হয়। যখন কোনো মানুষ সমাজের আইন-কানুন, মূল্যবোধ, বিশ্বাস মেনে চলেনা তখন সে সমাজের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হয়। বিভিন্ন দেশে সমাজের মূল্যবোধগত পার্থক্য থাকতে পারে। তবে প্রতিটি সমাজে কতগুলো সাধারণ নিয়মকানুন রয়েছে, যা সবাইকে মেনে চলতে হয়।সমাজবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সমাজ। শিশু জন্ম থেকে আমৃত্যু সমাজেই বাস করে, সমাজই শিশুকে সামাজিকতা শিক্ষা দেয়। সমাজের সৃষ্টিও মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন ও অভাব পূরণের জন্য হয়েছে। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের মাঝেই মানুষ তার কর্মদক্ষতাকে প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনাদি মিটিয়ে থাকে। আবার প্রয়োজনে সমাজকে নিয়ন্ত্রণও করে। কেননা নিয়ন্ত্রণহীন সমাজ মানুষের কাম্য নয়। সমাজবিজ্ঞানীরা সমাজ সম্পর্কে বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার ও পেজ তাদের ‘Society’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, “Society is a system of social relationships in and through which we live.”

জিসবার্ট বলেন: “Society, in general, consists in the complicated network of social relationship by which every human being is interconneted with his fellowmen.”

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্যঃ

মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বাস করতে গিয়ে সমাজ সৃষ্টি করেছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনেই সমাজের সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। আইনগত বিচারে রাষ্ট্র হলো একমাত্র সংগঠিত প্রতিষ্ঠান। দেশের শাসনব্যবস্থাকে কার্যকর করার বৈধ ও পরিপূর্ণ দায়িত্ব এ রাষ্ট্রের উপরই ন্যস্ত আছে। তাই জাতির সকলেই এর সদস্য একই ব্যক্তি একই সাথে একাধিক রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে না। তাই রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য বিভক্ত হয় না। অন্যদিকে, সমাজ হলো বহু সংগঠনের সমষ্টি। কোনো ব্যক্তি বিভিন্ন সামাজিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য একই সাথে একাধিক সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করে। এভাবে সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের আনুগত্য একাধিক সমিতির প্রতি প্রসারিত হয় বা বিভক্ত হয়।

২। আইনগত উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হলো একমাত্র প্রতিষ্ঠান। একমাত্র রাষ্ট্রই আইন প্রণয়ন ও বলবৎকরণের কাজ সম্পাদন করে থাকে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মূলত আইন বিষয়ক। বার্কারের মতানুসারে, “রাষ্ট্রের মুখ্য লক্ষ্য হলো বৈধ উদ্দেশ্য সাধন।” অন্যদিকে, সমাজের উদ্দেশ্য হলো বহু ও বিভিন্ন। সমাজের আর্থিক, নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বহু উদ্দেশ্য বর্তমান। বিভিন্ন সমিতি বা সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে এসব দায়িত্ব সম্পাদিত হয়।

৩। রাষ্ট্র একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সুসংগঠিত সরকারকে প্রয়োজনবোধে পরিবর্তন করা যায়, কিন্তু সার্বভৌম রাষ্ট্রের পরিবর্তন করা যায় না। অন্যদিকে, সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। সমাজ জীবনের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য পূরণ এবং ব্যক্তির পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিকাশের জন্য প্রয়োজনবোধে সমাজকে পরিবর্তন করা যায়।

৪। রাষ্ট্র সর্বাত্মক বা চরম সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকার সংরক্ষণ, ব্যক্তির প্রকৃত সত্তার বিকাশ, সামাজিক জীবন ও মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইন প্রণয়ন করে। এ আইনগুলো বাধ্যতামূলকভাবে নাগরিকদের উপর প্রযোজ্য। রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপনই ব্যক্তির প্রধান কর্তব্য। রাষ্ট্রীয় আদেশের বিরোধিতা করা অন্যায় এবং গর্হিত কাজ। অন্যদিকে, সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

৫। রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পরিচালনার জন্য একটি সুনিয়ন্ত্রিত সরকার থাকে। অন্যদিকে, সমাজ পরিচালনার জন্য কোনো সরকার থাকে না।

৬। সমাজের পরিধি রাষ্ট্রের পরিধি অপেক্ষা অনেক ব্যাপক। সমাজ মানুষের সার্বিক দিক পরিচালনা করে। অর্থাৎ, মানবজীবনের সকল দিকই সমাজের পরিধিভুক্ত। মানুষের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধনই হলো সমাজের উদ্দেশ্য। অন্যদিকে, রাষ্ট্র কেবল মানুষের রাষ্ট্রনৈতিক জীবনকেই নিয়ন্ত্রণ করে।

Exit mobile version