Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য

রাষ্ট্র ও সংঘের

রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও বিভিন্ন সংঘ চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করে। নিচে রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

রাষ্ট্র (State):
রাষ্ট্র বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।

ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাববিস্তারী সঙ্গানুযায়ী রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইনানুগ বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ রাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী, নাগরিক, সমাজ, আমলাতন্ত্র, আদালত এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সংঘ (Association):
সংঘ হলো একটি জনসমষ্টি,যারা কিছু সাধারণ উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্যসমূহ সাধনের জন্য একত্রিত এবং একমতে কিছু স্বীকৃত নিয়মকানুন অনুসারে পরিচালিত হয়ে একে অপরকে সহযোগিতা করে। যেমন-শিল্প ও বণিক সমিতি,ট্রেড ইউনিয়ন, প্রভৃতি।ম্যাকাইভারের মতে,”যখন কোন উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে মুষ্টিমেয় লোক সমাজবদ্ধ হয় তখন তাকে সংঘ(Association) বলা হয়।

ম্যাকাইভার ও পেজ বলেন, এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কোনো গোষ্ঠী যখন একত্রিত হয় তখন তাকে সংঘ বলে। তাঁরা আরো বলেন, সংঘ হচ্ছে এমন একটি গোষ্ঠী যা অভিন্ন গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গঠিত হয়। এ অর্থে আমরা রাষ্ট্রকে সংঘ বলতে পারি।

জিসবার্টের মতে “সংঘ হলো একটি মুখ্য গোষ্ঠী যা কোন বিশেষ বা কতক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গঠিত হয়।’’
পরিবার ও রাষ্ট্রকে সংঘ হিসাবে বিবেচনা করা যায়। সংঘকে কোনো কর্ম সম্পাদনের বাহনও (agency) বলা যায়। সেক্ষেত্রে সংঘ
একটি করপোরেশন সমতুল্য। সমাজ জীবনে মানুষের চাহিদা, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিচিত্র ধরনের। একক প্রচেষ্টায় মানুষের পক্ষে তার সব চাহিদা ও লক্ষ্য অর্জন করা অসম্ভব।

রাষ্ট্র ও সংঘের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড ও সীমারেখা থাকে। অন্যদিকে, সংঘের নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না। সংঘ রাষ্ট্রের ভিতরে গঠিত হতে পারে আবার রাষ্ট্রের সীমারেখা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি বিশ্বব্যাপীও হতে পারে। যেমন− অলিম্পিক এসোসিয়েশন।

২. রাষ্ট্র জনসাধারণের কল্যাণের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কৃষ্টিমূলক এবং সামাজিক কাজ করে। অন্যদিকে, কোন সংঘ, যেমন− বণিক সংঘ কেবলমাত্র ব্যবসা সংক্রান্ত কাজ করে।

৩. রাষ্ট্র স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, সংঘ অস্থায়ী সংগঠন। বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জনের পর সংঘ বিলুপ্ত হতে পারে।

৪. রাষ্ট্রের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক। মানুষকে কোন এক রাষ্ট্রের সদস্য হতেই হয়। অন্যদিকে, সংঘের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক নয়। কোন একটি সংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করা বা সদস্যপদ ত্যাগ করা ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। আবার একই সাথে অনেকগুলো সংঘের সদস্যপদও গ্রহণ করা যায়।

৫. সংঘ তার সদস্যদের উপর বলপ্রয়োগ করে আনুগত্য আদায় করতে পারে না। অন্যদিকে, রাষ্ট্র ব্যক্তির উপর বা ব্যক্তি দ্বারা গঠিত সংঘকে বলপ্রয়োগের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

Exit mobile version