আদিকোষ ও প্রকৃত কোষের মধ্যে পার্থক্য

আদিকোষঃ

যেসকল কোষে বা সেলে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না তাদের প্রোক্যারিওটিক সেল বা আদিকোষ বলে। প্রোক্যারিওটিক সেলে নিউক্লিয়াস কোনো পর্দা দ্বারা বেষ্টিত থাকে না। ফলে নিউক্লিওবস্তু সাইটোপ্লাজমে ছড়ানো থাকে। এসব সেলে মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম ইত্যাদি অঙ্গাণু থাকে না তবে রাইবোজোম থাকে। নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়ায় এ ধরনের সেল পাওয়া যায়।

আদিকোষে কোষ্প্রাচীর বা প্লাজমামেমব্রেন সুগঠিত নয় বরং অনেকটা সরাসরি রাসায়নিক পদার্থজমাকৃত কোষপ্রাচীর।
এছাড়া কোষের অভ্যান্তরে সাইটোপ্লাজম বা প্রোটোপ্লাজমও সুগঠিত নয়। নিউক্লিয়াসও সুগঠিত নয়। নিউক্লিয়াস এর গঠন ও উপাদান এতড়ি সরল যে তাকে নিউক্লিয়াস না বলে নিউক্লওয়েড বা নিউক্লিয়ার বস্তু বলা হয়ে থাকে।

প্রকৃত কোষঃ

যে সকল কোষের নিউক্লিয়াস সুগঠিত অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ঝিল্লি দ্বারা নিউক্লিও বস্তু পরিবেষ্টিত ও সুসংগঠিত থাকে তাকে প্রকৃত কোষ বলে। এসব কোষে রাইবোজোমসহ সকল অঙ্গাণু উপস্থিত থাকে। অধিকাংশ উচ্চ শ্রেণির জীবকোষ এ ধরনের হয়। কাজের ভিত্তিতে প্রকৃত কোষ দুই প্রকার, যথা– দেহকোষ এবং জননকোষ।

বহুকোষী জীবের দেহ গঠনে যেসব কোষ অংশগ্রহণ করে তাদেরকে দেহকোষ বলে। মাইটোটিক ও অ্যামাইটোটিক বিভাজনের মাধ্যমে এরা বিভাজিত হয়। অপরদিকে, যৌন প্রজনন ও জনুক্রম দেখা যায় এমন জীবে জনন কোষ উৎপন্ন হয়। এই কোষ শুধুমাত্র মিয়োসিস বিভাজনের মাধ্যমে বিভাজিত হয়।

আদিকোষ ও প্রকৃত কোষের মধ্যে পার্থক্যঃ

যেসকল কোষে বা সেলে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না তাদের প্রোক্যারিওটিক সেল বা আদিকোষ বলে। আদিকোষ ও প্রকৃত কোষের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-

১। আদি কোষ সুগঠিত নয়। অর্থাৎ আদিকোষের গঠন সরল এবং এর ভেতরে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গানুও কম। অন্যদিকে, প্রকৃত কোষ সুগঠিত। এতে বিভিন্ন ধরণের কোষীয় অঙ্গাণু বিদ্যমান।

২। আদিকোষে রাইবোজম ৩০s ও ৫০s সাবইউনিট দ্বারা গঠিত। অন্যদিকে, প্রকৃত কোষ ৬০s ও ৪০s উপ একক সাবইউনিট দ্বারা গঠিত।

৩। আদিকোষ সাইটোপ্লাজমীয় গঠন সরল, সাধারণত অর্ধতরল প্রকৃতির। অন্যদিকে প্রকৃত কোষ সাইটোপ্লাজম সাইটোকংকল জাতীয় ঘোন থকথকে পদার্থ দ্বারা গঠিত।

৪। আদি কোষে DNA বৃত্তাকার ও ননহিস্টন। অন্যদিকে, প্রকৃত কোষে DNA লম্বাকৃতি এতে সেন্ট্রোমিয়ার স্যাট ইত্যাদি থাকে। হিস্টোন প্রোটিন বিদ্যমান।

৫। আদিকোষে মাইটোকন্ড্রিয়া, গলজি বডি, ক্লোরোপ্লাস্ট, ইত্যাদি নেই। অন্যদিকে, প্রকৃত কোষ এসকল উপাদান্সহ অধিকাংশ কোষীয় অঙ্গানু বিদ্যমান।

৬। আদিকোষে নিউক্লিয়াস নাই, এর পরিবর্তে নিউক্লওয়েড বা নিউক্লিয়ার বস্তু সাইটোপ্লাজমে নগ্ন অবস্থায় থাকে। নিউক্লিয়ার বস্তুতে নিউক্লিয়াসের মত সকল উপাদান থাকেনা। অন্যদিকে, প্রকৃত কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস, নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাস ইত্যাদি থাকে।

৭। আদিকোষ খুবই ক্ষুদ্র,সাধারণত ১-১০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে। অন্যদিকে, প্রকৃতকোষ অপেক্ষাকৃত অনেক বড় । এটি ১০-১০০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে।

৮। আদিকোষে ফ্লাজেলার সাহায্যে কিছুটা চলন সম্পর্ণ করে। অন্যদিকে, শুক্রানু কোষ ফ্লাজেলার মত লেজের সাহায্যে চলতে পারে। অন্য কিছু বিশেষ কোষ সিলিয়া, টিউবিউলিন ইত্যাদির সাহায্যে কিছুটা চলতে পারে।

৯। আদিকোষে দ্বিবিভাজন প্রক্রিয়ায় কোষের বিভাজন ঘটে। অন্যদিকে, প্রকৃত কোষ মাইটোসিস, বাডীং, মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন ঘটে।

১০। আদিকোষ একক কোষ। কোন শ্রমবন্টন বা অঙ্গতন্ত্র নাই। অন্যদিকে, বহুকোষী জীবে বিভিন্ন অঙ্গ শ্রমবন্টন দেখা যায়।