পত্ররন্ধ্র (Stomata):
উদ্ভিদবিদ্যায় পত্ররন্ধ্র যাকে স্টোমেট বলা হয়, একটি ছিদ্র, যা পাতা, ডালপালার এপিডার্মিসে পাওয়া যায় , এবং অন্যান্য অঙ্গগুলি যা গ্যাস বিনিময়কে সহায়তা করে। ছিদ্রটি স্টোরমাটাল খোলার আকারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দায়ী গার্ড সেল হিসাবে পরিচিত বিশেষত পেরেনচাইমা কোষগুলির একটি জুড়ি দ্বারা সীমানাযুক্ত। পাতার এবং কচি কান্ডের ঊর্ধ্ব ও নিম্নতলের বহিঃত্বকে (এপিডার্মিসে) অবস্থিত দুটি রক্ষী কোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত সূক্ষ্ম রন্ধ্রকে পত্ররন্ধ্র বা স্টোম্যাটা বলে। অধিকাংশ পত্ররন্ধ্র সকাল ১০-১১ টা এবং বিকাল ২-৩ টায় পূর্ণ খোলা থাকে, অন্যান্য সময় আংশিক খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে।
পত্ররন্ধ্র পাতার উপরিতলে অবস্থিত দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির রক্ষী কোষ এবং এদের দিয়ে বেষ্টিত রন্ধ্র নিয়ে গঠিত। পত্ররন্ধ্রের রক্ষিকোষে একটি সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, বহু ক্লোরোপ্লাস্ট ও ঘন সাইটোপ্লাজম থাকে। রক্ষীকোষে প্রচুর ক্লোরোপ্লাস্ট থাকায় এটি খাদ্য তৈরি করে। রক্ষীকোষের চারিদিকে অবস্থিত সাধারণ ত্বকীয় কোষ হতে একটু ভিন্ন আকার আকৃতির ত্বকীয় সহকারী কোষ থাকে। স্টোম্যাটার নিচে একটি বড় বায়ুকুঠুরী থাকে।
পানিপত্ররন্ধ্র (Hydathode):
পানি-পত্ররন্ধ্র সাধারণত সপুষ্পক উদ্ভিদের বহিঃত্বকে প্রাপ্ত এক ধরনের ছিদ্র, যা পাতার বহিঃত্বক বা এর কিনারা থেকে তরল পানি নিঃসরণ করে। পাতার একদম প্রান্তভাগ বা প্রান্তের সম্পূর্ণ অংশের পানিপত্ররন্ধ্র দিয়ে পানি নির্গত হতে পারে। পানিপত্ররন্ধ্র পানিতে নিমজ্জিত Ranunculus fluitans প্রভৃতি উদ্ভিদে যেমন দেখা যায়, তেমনি স্কটিশ ব্লুবেল (Campanula rotundifolia) প্রভৃতি স্থলজ বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদেও দেখা যায়।[২] এই ছিদ্রপথটি পরিবহন কলাগুচ্ছ দিয়ে উদ্ভিদের মূল সংবহনতন্ত্রের সাথে যুক্ত। পানিপত্ররন্ধ্র টোপাপানা, কচুরিপানা, গোলাপ, ব্যালসাম ও আরো অনেক প্রজাতির উদ্ভিদে পাওয়া যায়।
মূলীয় চাপের কারণে সৃষ্ট জাইলেম চাপের ফলে তরল পানি গাটেশন প্রক্রিয়ায় পানিপত্ররন্ধ্র দিয়ে বের হয়ে যায়। কিছু কিছু লোনা পানির উদ্ভিদে গ্রন্থিযুক্ত ট্রাইকোম থাকে, যা সক্রিয়ভাবে লবণ নিঃসরণের মাধ্যমে কোষীয় সাইটোপ্লাজমে অজৈব সাইটোটক্সিক আয়নের ঘনমাত্রা হ্রাস করে। এর ফলে পাতার উপরিতলে সাদা লবণের স্তর জমা হতে দেখা যায়।
পত্ররন্ধ্র ও পানি পত্ররন্ধ্র এর মধ্যে পার্থক্যঃ
পানি পত্ররন্ধ্র এক বিশেষ ধরনের পানি নির্মচন অঙ্গ। ঘাস, কচু এবং টমেটো এর ক্ষেত্রে এটি দেখা যায়। পত্ররন্ধ্র ও পানি পত্ররন্ধ্র এর মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য রয়েছে। তা নিচে দেখানো হয়েছে-
১. পত্ররন্ধ্র পাতার ঊর্ধ্ব ও নিম্ন ত্বক এ থাকে। অন্যদিকে, পানি পত্ররন্ধ্র পাতার কিনারা তে থাকে।
২. পত্ররন্ধ্র এ পানি নির্গমন দিনের আলো তে বেশি হয়। অন্যদিকে, পানি পত্ররন্ধ্রে রাতে পানি নির্গমন বেশি হয়।
৩. পত্ররন্ধ্র এ বাষ্পের মাধ্যমে নির্গত হয়। অন্যদিকে, পানি পত্ররন্ধ্র এর বেলায় তরল আকারে নির্গত হয়।
৪. পত্ররন্ধ্র তে পানির সঙ্গে খনিজ লবণ এর মুক্তি ঘটে না। অন্যদিকে, পানি পত্ররন্ধ্র এর ক্ষেত্রে পানির সঙ্গে খনিজ লবণ এর মুক্তি ঘটে।
৫. পত্ররন্ধ্র এর এপিথেলিয়াম নেই। অন্যদিকে, পানি পত্ররন্ধ্র এর এপিথেলিয়াম আছে।
৬.পত্ররন্ধ্র রক্ষিকোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে, পানি পত্ররন্ধ্র রক্ষী কোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রণশীল নয়।