সমন ও ওয়ারেন্ট আইনি প্রক্রিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য এবং কার্যপ্রণালী ভিন্ন। সমন ও ওয়ারেন্ট এর মধ্যে কার্যপ্রণালীগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে সমন ও ওয়ারেন্ট এর মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হয়েছে-
সমন (Summon) :
ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৬৮ ধারা মোতাবেক মামলার বাদী ও সাক্ষীকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করার জন্য সমন ইস্যু করা হয়। বিজ্ঞ আদালত এই সমন ইস্যু করেন। সমন দুই কপি ইস্যু করা হয়। এককপি সমন প্রাপকের নিকট জারি করা হয় এবং অপর কপিতে প্রাপকের স্বাক্ষর গ্রহন করে বিজ্ঞ আদালতে ফেরত দিতে হয়। কোন বাদী অথবা সাক্ষী সমন পাওয়ার পর আদালতে হাজির না হলে তখন বাদী ও সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে বাধ্য করার জন্য বিজ্ঞ আদালত সাক্ষীর প্রতি ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। উক্ত ওয়ারেন্ট পাওয়ার পর থানা পুলিশ সাক্ষীকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে পারেন।
ওয়ারেন্ট (Warrant) :
ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৭৫ ধারা মোতাবেক আসামীকে আদালতে হাজির করার জন্য ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়। বিজ্ঞ আদালত এই ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। ওয়ারেন্ট এককপি ইস্যু করা হয়। আদালতের ওয়ারেন্টমুলে থানা পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করতে পারেন। থানা পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে আদালতে হাজির করতে ব্যর্থ হলে অথবা আসামী স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির না হলে আসামীকে আদালতে হাজির হতে বাধ্য করার জন্য আদালত আসামীর প্রতি ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৮৭ ধারা মোতাবেক হুলিয়া এবং ফৌজদারী কার্যবিধি আইন ১৮৯৮ এর ৮৮ ধারা মোতাবেক ক্রোকী পরোয়ানা ইস্যু করেন।
এই হুলিয়া এবং ক্রোকী পরোয়ানা থানা পুলিশ জারী করার পরও আসামী আদালতে হাজির না হলে বিজ্ঞ আদালত আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার কার্য শুরু করেন।
সমন ও ওয়ারেন্ট এর মধ্যে পার্থক্যঃ
১. কোনো মামলার বাদী/সাক্ষী/আসামীকে নির্দিষ্ট দিনে আদালতে (Court) উপস্থিত হওয়ার জন্য আদালতের প্রিজাইডিং অফিসার বা হাইকোর্ট কর্তৃক স্বাক্ষরিত সিলমোহর অঙ্কিত নির্দেশপত্রকে সমন(Summon) বলে।
অন্যদিকে, কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে নাম ঠিকানা সম্বলিত মামলার নাম্বার ও অপরাধের ধারা এবং তামিলকারী অফিসারের নাম-পদবী উল্লেখপূর্বক নির্ধারিত ফরমের এক কপিতে বিচারক কর্তৃক স্বাক্ষরিত (সিলমোহর যুক্ত) আদেশপত্রকে ওয়ারেন্ট(Warrant) বা পরোয়ানা বলে।
২. ফৌজদারী কার্যবিধির ৬৮ ধারা ,পিআরবি ৪৭১(ঘ) বিধিতে সমন(Summon) সম্পর্কে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারা, পিআরবি ৩১৫ ও ৪৬৮ বিধিতে ওয়ারেন্ট(Warrant) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. কোন ব্যক্তিকে [বাদী/সাক্ষী/আসামী] আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়। অন্যদিকে, কোন ব্যক্তিকে [আসামী] গ্রেফতার করে আদালতে হাজিরের জন্য ওয়ারেন্ট বা পরোয়ানা জারি হয়।
৪. সমনে উল্লেখিত ধার্য তারিখ অতিবাহিত হয়ে গেলে সমনের(Summon) কার্যকারিতা আর থাকে না। অন্যদিকে, আসামী গ্রেফতার অথবা আদালত কর্তৃক ওয়ারেন্ট বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ওয়ারেন্ট থানায় মুলতবি থাকে।
৫. ফৌজদারী কার্যবিধির ৬৯,৭০,৭১,৭২ ও ৭৩ ধারা মোতাবেক সমন জারি করা হয়। অন্যদিকে, ফৌজদারী কার্যবিধির ৭৫ ধারা এবং পিআরবি ৩১৫ বিধি অনুসারে ওয়ারেন্ট কার্যকর করা হয়ে থাকে ।