যোগান (Supply):
সাধারণ অর্থে যোগান বলতে কোনো দ্রব্যের সরবরাহকে নির্দেশ করে। কিন্তুু অর্থনীতিতে যোগান বলতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পণ্যে বিক্রেতাগণ কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বাজারে বিক্রয় করতে রাজি থাকে তাকে যোগান বলে। কোন দ্রব্যের যোগান সাধারণত: উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। দ্রব্যের যোগান দাম ও সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই চাহিদার ন্যায় যোগানের ক্ষেত্রেও অন্যান্য বিষয়কে স্থির বিবেচনা করে যোগানকে শুধুমাত্র দামের সাথে একটি ক্রিয়া বা অপেক্ষক বিবেচনা করা হয়। সুতরাং কোনো বিক্রেতা বা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান কোন নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দামে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করতে প্রস্তুত থাকে তাকে অর্থনীতিতে যোগান (Supply) বলে।
মজুদ (Stock):
মজুদ হলো বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যের মোট পরিমাণ। কোনো কারবার প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয়ের জন্য উৎপাদিত বা ক্রয়কৃত পণ্যের যে অংশ অবিক্রীত থেকে যায় এবং যা পূর্ণ বিক্রয়যোগ্য তাকে মজুদ পণ্য বলে। মজুত পণ্য একটি দৃশ্যমান ও স্পর্শযোগ্য চলতি সম্পদ। মজুদ একটি পূর্ণাঙ্গ/বৃহত্তর ধারণা। বিক্রয়যোগ্য একটি দ্রব্যের সমগ্র পরিমাণকে মজুদ বলা হয়। অর্থাৎ বিক্রয়যোগ্য সকল দ্রব্যের মোট পরিমাণকে মজুদ হিসাবে অভিহিত করা হয়।
Harmanson এবং Others-এর মতে, “Merchandise inventory is the quantity of goods on hand and available for sale at any given time.”
Pyle এবং Lacrson-এর মতে, “Merchandise inventory is the unsold merchandise on hand at a given time.”
এল. জে. গ্যারেট ও মিল্টন সিলভার-এর মতে, “মজুত পণ্য হচ্ছে যেকোনো ধরনের একটি অলস সম্পদ যা অর্থনৈতিক মূল্য প্রক্রিয়াকরণ করে।”
যোগান ও মজুদ এর মধ্যে পার্থক্যঃ
যোগান ও মজুদ দু’টি সমার্থক শব্দ হলেও অর্থনীতিতে এ দু’টি শব্দ ভিন্ন অর্থে ব্যবহূত হয়। নিম্নে যোগান ও মজুদের মধ্যে পার্থক্য উপস্থাপন করা হলো:
১। কোনো দ্রব্যের বিক্রয়যোগ্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণকে যোগান বলে। অর্থাত্ একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রেতাগণ কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রয় করতে প্রস্তুত থাকে তাকেই যোগান বলে। অন্যদিকে, মজুদ একটি পূর্ণাঙ্গ/বৃহত্তর ধারণা। বিক্রয়যোগ্য একটি দ্রব্যের সমগ্র পরিমাণকে মজুদ বলা হয়।
২। মজুদ একটি বৃহত্তর ধারণা। সে তুলনায় যোগান একটি ক্ষুদ্রতর ধারণা।
৩। নির্দিষ্ট দামে যোগানের সৃষ্টি হয় মজুদ থেকে। তাই মজুদ একটি সম্পূর্ণ ধারণা। অন্যদিকে, মজুদের একটি অংশ হলো যোগান। কাজেই মজুদের তুলনায় যোগান আংশিক ধারণা মাত্র।
৪। মজুদের সাথে দামের কোনো সম্পর্ক নাই। অন্যদিকে, যোগান একটি নির্দিষ্ট দামের সাথে সম্পর্কিত। দাম বাড়লে বা কমলে স্বল্পকালে যোগানের পরিমাণ বাড়ে কমে কিন্তু মজুদের পরিবর্তন হয় না।
৫। বাজারে কোনো দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে যোগান বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে, দাম হ্রাস পেলে, যোগান হ্রাস পায়। অন্যদিকে, বাজারে কোনো দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে মজুদ হ্রাস পায় অন্যদিকে, দাম হ্রাস পেলে মজুদ বৃদ্ধি পায়।
৬। যোগানের উদাহরণ-মনে করি, একজন বিক্রেতার কাছে বিক্রয়যোগ্য মোট ১০০ মণ ধানের মধ্যে ১০০০ টাকা দামে বিক্রেতা ৫০ মণ ধান বিক্রয় করতে ইচ্ছুক। এক্ষেত্রে মজুদের পরিমাণ হবে ৫০ মণ ধান। অন্যদিকে মজুদ এর উদাহরণ- মনে করি, একজন বিক্রেতার কাছে বিক্রয়যোগ্য মোট ১০০ মণ ধান রয়েছে। এক্ষেত্রে মজুদের পরিমাণ হবে ১০০ মণ ধান।