চা (Tea):
চা মৌসুমী অঞ্চলের পার্বত্য ও উচ্চভূমির ফসল। একপ্রকার চিরহরিৎ বৃক্ষের পাতা শুকিয়ে চা প্রস্তুত করা হয়। চীন দেশই চায়ের আদি জন্মভূমি। বর্তমানে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য পানীয়রূপে গণ্য করা হয়। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ।
চা বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চা পাতা পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। চা গাছ থেকে চা পাতা পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। ‘চা পাতা’ কার্যত চা গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। সর্বোচ্চ চা রফতানি কারক দেশ হল বাংলাদেশ। পানির পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। এর একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং অনেকেই এটি উপভোগ করে। প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন – কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা।এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে।
কফি (Coffee):
কফি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিক্রিত পণ্য (জ্বালানী তেলের পরে) এবং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি পানকৃত পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৯৮-২০০০ সালের মধ্যে ৬.৭ মিলিয়ন টন কফি উৎপন্ন হয়েছে। ২০১০ সাল নাগাদ কফির উৎপাদন বেড়ে ৭ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচলিত উত্তেজক পানীয় হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ১৯৯৯ সালের হিসেব অনুযায়ী আমেরিকার নাগরিকগণ প্রতিদিন গড়ে ৩.৫ কাপ কফি পানীয়রূপে গ্রহণ করে থাকেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ নিয়মিত কফি পান করে থাকেন এবং তারা গড়ে প্রতিদিন ৩ কাপ কফি পান করেন। ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ কফি পান করে আসছে। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কফি পানের প্রমাণ পাওয়া যায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইথিওপিয়া।
কফি বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়।পানির সাথে ফুটিয়ে রান্না করা “কফি বীজ” নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। সবুজ কফি বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রীত কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কফি লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ক্যান্সার রোধ করে। এতে থাকা অধিক পরিমানে ক্যাফেইন নিম্ন রক্তচাপ জাতীয় সমস্যার জন্যে উপকারী। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এটি অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
চা ও কফির মধ্যে পার্থক্যঃ
চা আর কফি- সারাবিশ্বে বহুল জনপ্রিয় দুটি পানীয়। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই যে কোনো একটি ছাড়া দিনটিই যেন ঠিকমতো শুরু হয় না। শরীর চাঙা করতে এদুটির জুড়ি না থাকলেও উভয় পানীয়েরই ভালো খারাপ দিক রয়েছে। চা ও কফির মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচন করা হয়েছে-
১। পরিশোধিত কফিতে ক্যাফেস্টল ও কাহওয়েল নামক উপাদান না থাকলেও এসপ্রেসো বা ফ্রেন্স প্রেসড কফির মতো অপরিশোধিত কফিতে তা থেকেই যায়। এ দুটি উপাদান রক্তে কোলস্টেরল এলডিএল লেভেল বাড়াতে পারে। আর এতে বাড়তে পারে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি। তাই কফি বাদ দিয়ে চা খাওয়া শুরু করলে রক্তের কোলস্টেরলের মাত্রার উন্নতি ঘটতে পারে।
২। এক কাপ লিকার চায়ে কম-বেশি ১৪-৭০ মিলি গ্রাম ক্যাফেইন থাকে। অন্যদিকে, যেখানে সমপরিমাণ কফিতে ৯৫-২০০ মিলি গ্রাম। তাই কফি খাবেন ঠিকই, তবে বেশি মাত্রায় না।
২। লিকার চায়ে রয়েছে থিয়াফ্লাভিনস এবং ক্যাটাচিন। অন্যদিকে, এদিকে কফিতে মজুত রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ক্লোরোজেনিক এসিড। এই বিভাগে কফির চেয়ে চা-ই এগিয়ে থাকবে।
৩। ক্লান্তি দূর করতে কফির মতোই কাজ করে চা। বলতে পারেন, কফির থেকে একটু বেশিই কাজ করে। কারণ, এই পানীয়তে ক্যাফেইনের পাশাপাশি রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই দু’য়ের যুগলবন্দিতে ক্লান্তি তো দূর হয়ই, সেই সঙ্গে ব্রেনের ক্ষমতাও বাড়ে।
৪। চা আর কফি- এই দুই পানীয়তেই আছে ট্যানিন, নানা ধরনের অ্যাসিড এবং ক্রোমোজেন। এই তিনটি উপাদানই দাঁতের রং পাল্টে দেওয়া থেকে শুরু করে দাঁতের ক্ষয়ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু চা-ই বেশি ক্ষতিটা করে থাকে, কারণ, চায়ে কফির তুলনায় বেশি ট্যানিন থাকে।
৫। শরীরের প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে চা বা কফি। দুটোই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে। হৃদরোগ থেকে রক্ষায় ভালো কাজ করে কফি। আবার ক্যানসার যেন সৃষ্টি না হয়, সে কাজ করে চা।