শিক্ষা (Teaching):
মানুষের মধ্যে আকাংঙ্খিত আচরণিক পরিবর্তন আনয়নের প্রক্রিয়াকে শিক্ষা বলে। প্রশিক্ষণও আচরণিক পরিবর্তন আনয়ন প্রক্রিয়া তবে প্রশিক্ষণের তাৎক্ষণিক কিছু উদ্দেশ্য থাকে। প্রশিক্ষণ সাধারণত মানুষকে তার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে সামর্থ করে। প্রশিক্ষণকে শিক্ষা সমন্বয়কারী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। প্রশিক্ষণার্থীর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বা কাঙ্খিত কর্মকান্ড বাস্তবায়নে বা অসুবিধা বা বাধা বিপত্তি দূর করতে প্রশিক্ষণে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থাদি রাখা হয়। সাধারণ অর্থে বিদ্যাভ্যাসকে শিক্ষা বলা হয়। অন্য কথায় শিক্ষা হলো শিক্ষার্থীর মাঝে তার সুপ্ত প্রতিভা বা সম্ভাবনাকে বিকশিত করার পথ নির্দেশক প্রাক্রয়া।
শিখন (Learning):
শিখন নতুন কোন বিষয়ের সংযোজন বা বিয়োজন অথবা কোন পরিবর্তন হতে পারে। এ পরিবর্তনের মাধ্যমে শিখনের ফলাফল হতে পারে ইতিবাচক বা নেতিবাচক। শিখন এমন একটি প্রক্রিয়া যা কতক গুলো উপাদানের ওপর ভিত্তি করে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়। শিখন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বিভিন্ন কাজ, যেমন-বই পড়া, ছবি দেখা, আলোচনায় অংশগ্রহণ করা, কোন নতুন কাজ করা ইত্যাদি হতে অভিজ্ঞতা অর্জন করে, ফলেতার জ্ঞান, দক্ষতা ও মনোভাব আকাঙ্খিত পরিবর্তন হয়। শিখন প্রক্রিয়ার উপাদান গুলো হলো অভিপ্রায়, লক্ষ্য, বাধা ও চেষ্টা। সমস্যা বা অভাববোধ থেকে শিখনের সুত্রপাত হয় এবং সমস্যার সমাধান বা অভাব পূরণে এর সমাপ্তি হয়।
মানুষ তার সমস্যাদি সমাধানের জন্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থির করে। কিন্তু উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মাঝে এক বা একাধিক বাধা থাকায় সহজে লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। ঠেকেই মানুষকে শিখতে হয়। কারণ শিখনের সহজ কোন পথ নেই। লক্ষ্য অর্জনে অগ্রসর হতে যখন মানুষ বাধাপ্রাপ্ত হয়, তখন সে বাধা অতিক্রম করতে উপায় খুঁজতে থাকে। সে চেষ্টা করে এবং এক সময় বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছায় এবং ভবিষ্যতে এরূপ বাধা আসলে তার অভিজ্ঞতার সাহায্যে সহজেই অতিক্রম করতে পারে।
শিক্ষা ও শিখনের মধ্যে পার্থক্য
শিক্ষা ও শিখনের মধ্যে অধিকাংশ বিষয়ে মিল থাকরেও তাদের মধ্যে বেশ কিছু অমিল রয়েছে। তাই শিক্ষা ও শিখনের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
শিক্ষা মানুষের আচরণিক পরিবর্তন আনয়নের প্রক্রিয়া। শিক্ষা দ্বারা মানুষের কাংঙ্খিত পরিবর্তন আনয়নের চেষ্টা করা হয়। আমাদের দেশেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মধ্যে কাঙ্খিত পরিবর্তন আনয়নের জন্য শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের প্রবর্তন করা হয়েছে। যেমন- প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা,স্নাতক, ভোকেশনাল, ধর্মীয়ও বয়স্ক শিক্ষা। মানুষের মধ্যে কাঙ্খিত আচরণিক পরিবর্তন আনয়নের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনাকে শিক্ষা বলা যেতে পারে।
অপর পক্ষে শিখন হচ্ছেশিক্ষার্থীর মধ্যে তার আচরণিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। প্রকৃত পক্ষে শিখনের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াটি আমরা সরাসরি প্রত্যক্ষ করতে পারি না। ব্যক্তির আচার আচরণ থেকে শিখনের ব্যাপারটা অনুধাবন করা যায়। শিখনের জন্য দরকার ব ̈ব্যক্তির শরীরিক ও স্লায়বিক পরিবর্তন। শিখনের সাথে ব্যক্তির দৈহিক ও সামাজিক বিকাশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। একজন কৃষককে উপকারী পোকা চিহ্নিত করতে শেখালে, সে যদি নির্ভুলভাবে উপকারী পোকা শনাক্ত করতে পারে, তাহলে আমরা বলব সে কৃষককে যা শিখতে বলা হয়েছিল সে তা শিখেছে অর্থাৎ তার শিখন হয়েছে। শিখনের প্রধান ভূমিকা হলো মানুষের নতুন জ্ঞান লাভের সাথে সাথে পুরাতন জ্ঞানকে সংশোধন করে শক্তিশালী করা।