পরিভাষা (Terminology) :
যে শব্দের দ্বারা সংক্ষেপে কোনো বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায় তাকেই পরিভাষা বলা হয়। শব্দ হল যেকোনো কিছুর নাম বা তাকে ভাষায় প্রকাশ করার উপায়, প্রতিশব্দ হল সমার্থক শব্দ; কিন্তু পরিভাষা পুরোপুরিই সংজ্ঞাবাচক। এর অর্থ ব্যাপক। একটি পরিভাষা একটি পরিপূর্ণ সংজ্ঞাকে নির্দেশ করে।
‘পরিভাষা‘ হচ্ছে বিদেশি শব্দের বাংলা অনুবাদমূলক শব্দ ও শব্দগুচ্ছ । এগুলোর ইংরেজি প্রতিশব্দ- Terminology
। পরিভাষারূপে গৃহীত ও স্বীকৃত শব্দই পারিভাষিক শব্দ- term বা technical term । রাজশেখর বসুর মতে- পরিভাষা অর্থ সংক্ষেপার্থ শব্দ । অর্থাৎ যে শব্দের দ্বারা কোনো বিষয় সংক্ষেপে ও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যক্ত করা যায়, তা পরিভাষা । যেমন- সাহিত্য (Literature), ব্যাকরণ (Grammar), অভিধান (Dictionary), বিজ্ঞান (Science), ভূগোল (Geography), মানচিত্র (Map) ।
শব্দ (Words):
একটি একক ধ্বনি দিয়ে কখনো কখনো ভাব প্রকাশ করা গেলেও মানবমনের অসংখ্য বিচিত্র ভাব প্রকাশের জন্য একক ধ্বনি যথেষ্ট নয়। তাই ভাষায় উপস্থিত ধ্বনিগুলিকে বিভিন্ন সমন্বয়ে সাজিয়ে ধ্বনির সমষ্টি তৈরি করা হয়। এই সমষ্টিগুলি একটি করে অর্থ প্রকাশ করে। এই ধরণের ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। তবে একটি একক ধ্বনিও শব্দ হতে পারে, যদি তা দিয়ে কোনো অর্থ প্রকাশ করা যায়।
যেমনঃ ক্+অ+ল্+অ+ম্+অ= কলম।
পরিভাষা ও শব্দের মধ্যে পার্থক্যঃ
পরিভাষা ও শব্দের পার্থক্য | পরিভাষা ও বিদেশি শব্দের পার্থক্য | নির্মিতি | ভাষা ও শিক্ষা , শব্দ ও পরিভাষার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। পরিভাষা ও শব্দের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক প্রতিশব্দকে পারিভাষিক শব্দ বলে। অন্যদিকে, অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা বর্ণ ও ধ্বনি বা বর্ণসমষ্টিকে শব্দ বলে।
২. পরিভাষা কোনো জ্ঞান ক্ষেত্রের বৈশিষ্ট্য জ্ঞাপক ধারনার সংজ্ঞার্থ বা নাম। অন্যদিকে, শব্দ হলো ভাষায় ব্যবহৃত যেকোনো অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টি।
৩. পারিভাষিক শব্দ হলো বিদেশি বা দেশীয় কোনো ভাষার মূলশব্দ বা তার অনুবাদ বা মূল শব্দের কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত রূপ সংবলিত শব্দাবলি যা মাতৃভাষার প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, বিদেশি শব্দ হল কোনো বিদেশি ভাষার মূল শব্দ
৪. বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, ধর্মতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব প্রভৃতি শাস্ত্রীয় বিষয়ে শব্দের প্রয়োজন হলে পণ্ডিতগণ পারিভাষিক শব্দ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, শব্দ যেকোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি হতে পারে। এতে এককভাবে কোন নিদিষ্ট ব্যক্তি বা পণ্ডিতের প্রয়োজন হয় না। সাধারণ কথোপকথন শব্দ সৃষ্টির অন্যতম উৎস।
৫. পারিভাষিক শব্দ বিশেষ বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, সাধারণ শব্দ যেকোন বিষয় ও আলোচনা কিংবা কথোপকথনে ব্যবহৃত হতে পারে।
৬. সব শব্দই পারিভাষিক শব্দ নয়, কিন্তু সব পারিভাষিক শব্দই সাধারণ শব্দ।