থিসিস (Thesis):
থিসিস বা অভিসন্দর্ভ হল একটি দীর্ঘ পরীক্ষামূলক, তাত্ত্বিক প্রতিবেদন, যার একটি সমস্যা, পদ্ধতি, ফলাফল, এবং আলোচনার কাঠামো রয়েছে। অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুসারে, থিসিস হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির জন্য লিখিত দীর্ঘ প্রবন্ধ। থিসিস লেখার পরিধি, দৈর্ঘ্য ও প্রকৃতি ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু একটি থিসিস লেখার মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য একই থাকে।
থিসিস (Thesis) হল দীর্ঘ একাডেমিক লেখা যার সাথে ব্যক্তিগত গবেষণা জড়িত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা পাওয়ার জন্য লেখা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করার অংশ হিসেবে মূলত থিসিস লেখা হয়। এই থিসিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত বিষয়ের ওপর বা কয়েকটি টপিক নিয়ে ৩০-৫০ পাতার মধ্যে বিশদ তত্ত্বসহ লেখা হয়। একজন বা কয়েকজন সুপারভাইজরের তত্বাবধানে থিসিসের কাজ সম্পন্ন হয়।
থিসিস লেখা সম্পন্ন হলে, তা কমিটি, সুপারভাইজার, অন্যান্য অধ্যাপকের সামনে প্রেজেন্টেশন আকারে উপস্থাপন করা হয়। সবশেষে, ভাইভা নেওয়ার মাধ্যমে থিসিস এর ফলাফল দেওয়া হয়। স্নাতক শেষ করার পর এই থিসিস প্রায় আর কাজে আসে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে থেকে যায়।
গবেষণা (Research):
গবেষণা হল মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় বিজ্ঞানীদের কার্যাবলী। যিনি গবেষণা করেন বা গবেষণা কর্মের সাথে জড়িত, তিনি গবেষক বা গবেষণাকারী নামে পরিচিত। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হল বাস্তবিক কোনো সমস্যার সমাধান করা। গবেষণা একটি ধারাবাহিক কার্যপ্রক্রিয়া যা নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ এর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
ডেনীয় ভাষাবিজ্ঞানী রাস্মুস রাস্কের মতে, “গবেষণা একটি বিশেষ অভিমত, যা মানস কাঠামোর অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি, গবেষণায় যেসব প্রশ্নের অবতারনা করা হয়, যা এর আগে কোনো দিন উদঘাটন হয় নাই, এবং গবেষণার মাধ্যমে সেই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় ।”
গবেষণা সম্পর্কে এইসব সংজ্ঞা গুলি যদি আমরা বিশ্লেষন করি তাহলে এটা বলা যায়, গবেষণা গবেষকের মৌলিকতার স্বাক্ষর বহন করে । জ্ঞান অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্য আবিষ্কার করাই যে কোনো গবেষণার লক্ষ্য । তাই অনেকে মনে করেন যে, যা সকলের কাছে অজানা তা জানার নাম গবেষণা নয়। বরং যে বিষয়ে সকলের কমবেশি জ্ঞান রয়েছে সেই বিষয়ে যথার্থ বা সম্যক জ্ঞান লাভের পদ্ধতি হল গবেষণা।
থিসিস এবং গবেষণার মধ্যে পার্থক্যঃ
থিসিস এবং গবেষণার মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে। থিসিস এবং গবেষণার মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
১. একটি থিসিস লেখার উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রী লাভ করা। অন্যদিকে, একটি গবেষণাপত্র লেখার উদ্দেশ্য জ্ঞান প্রসারিত হয়।
২. যেহেতু থিসিস ডিগ্রি পাওয়ার জন্য লেখা হয় তাই এটি সাধারণত একটি গবেষণা পত্রের চেয়ে দীর্ঘ হয়।
৩. থিসিস সর্বদা কারো তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয় অর্থাৎ থিসিস সম্পূর্ণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর জন্য একজন সুপারভাইজার নিয়োগ করে। অন্যদিকে, গবেষণার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই কোনো সুপারভাইজার নিয়োগ দেওয়া হয় না।
৪. থিসিসের বিষয়বস্তু এবং একটি মৌখিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়া হয় । অন্যদিকে, গবেষণাপত্রের প্ল্যাজারিজম চেক এবং গবেষণা পত্রের বিষয়বস্তু যাচাই-বাছাই শেষে গবেষণাপত্রটির ফলাফল দেয়া হয়।
৫। গবেষণাপত্রের তুলনায় থিসিসের জন্য মৌলিকতার চাহিদা অনেক বেশি।