টর্ট অপরাধ (Tort Offence):
টর্ট শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ, Tortam থেকে, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ করলে দাঁড়ায় Twist, একটু সহজ ভাবে বুঝতে চাইলে এমন কোনো কাজ করা বা করা থেকে বিরত থাকা, যেগুলো সঠিক বা আইনানুগ নয়। যখন কোন ব্যক্তি তার দায়িত্ব কর্তব্য থেকে সরে গিয়ে কিংবা বিচ্যুতি হয়ে অন্য কারো ক্ষতি সাধন করে তখন তাকে Tort বলা হয়। টর্ট আইন সম্পর্কে আমাদের দেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে স্যামন্ড এর মতে, টর্ট হচ্ছে এক ধরনের দেওয়ানি ক্ষতি, যার প্রতিকার হচ্ছে অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণ, এবং যেটি চুক্তি বা বিশ্বাসভঙ্গ না আবার সাধারণ ন্যায়সংগত দায় ও নয়।
টর্ট সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা এখনো পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। এটি মুলত ধারণা এবং লিগ্যাল ম্যাক্সিমের উপর ভিত্তি করে বর্তমান রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত স্যালমন্ডের অভিমতটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত, যেখানে তিনি বলেছেন,Tort is a civil wrong for which the remedy in common law action for unliquidated damages, and which is not exclusively the breach of a contrat, or, the breach of a trust, or, other merely equitable obligation.
ফৌজদারি অপরাধ (Criminal Offence):
ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। এক কথায় চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, প্রতারণা, দস্যুতা, লুটপাট, বিস্ফোরণ, ধর্ষণ, অপহরণ, বেআইনি সমাবেশ, যৌন হয়রানি, জালিয়াতি, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান প্রভৃতি অপরাধে যেসব মামলা দায়ের করা হয় তাকে ফৌজদারি মামলা বলা হয়। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে জেল জরিমানা, যাবজ্জীবন এবং মৃত্যুদণ্ড হয়ে থাকে।
সাধারণত ফৌজদারি মামলায় দুইভাবে চিহ্নিত করা হয়, আমলযোগ্য ও আমল অযোগ্য মামলা। আবার আমলযোগ্য মামলাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, একটি জি আর বা পুলিশি মামলা অন্যটি সি আর বা নালিশি মামলা। আইন মোতাবেক কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারবে। এসব ক্ষেত্রে থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে থাকেন। এসব অপরাধে যে মামলা হয় তাকে আমলযোগ্য মামলা বলা হয়। কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারে না। অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যে প্রসিকিউিশন ওয়ারেন্ট বা নন-এফআইআর মামলা আদালতে দাখিল করেন। এগুলো আমল অযোগ্য মামলা। এ ধরনের অপরাধের মামলা কোর্টের নন-জিআর রেজিস্ট্রারভুক্ত হয়ে পরিচালিত হয় বলে এ মামলাকে নন-জিআর মামলা বলা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সরাসরি গিয়েও কোর্ট ফি দিয়ে বিচার প্রার্থনা করা যায়। এ ক্ষেত্রে কার্যবিধির ২০০ ধারায় শপথ নিয়ে আবেদনের উল্টো পিঠে জবানবন্দি রেকর্ড করতে হয়। কোর্ট রেজিস্ট্রার মামলা নথিভুক্ত করে পরিচালিত হওয়ার কারণে এগুলোকে সিআর মামলা বলা হয়।
টর্ট ও ফৌজদারী অপরাধের মধ্যে পার্থক্যঃ
টর্ট ও ফৌজদারী দুটিই অপরাধমূলক কাজ হলেও এদের মধ্যে আইনি কিছু পার্থক্য রয়েছে। তাই টর্ট ও ফৌজদারী অপরাধের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-
১. ব্যক্তির অধিকার ও সম্পত্তির অধিকার ব্যতিত যেকোনো অপরাধ ফৌজদারি মামলার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হাঙ্গামা, ব্যক্তির জীবন হরণ, অর্থসম্পদ লুটপাট ও যৌন হয়রানির অপরাধে ফৌজদারি মামলার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
অন্যদিকে, টর্ট আইন সম্পর্কে আমাদের দেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তবে স্যামন্ড এর মতে, টর্ট হচ্ছে এক ধরনের দেওয়ানি ক্ষতি, যার প্রতিকার হচ্ছে অনির্ধারিত ক্ষতিপূরণ, এবং যেটি চুক্তি বা বিশ্বাসভঙ্গ না আবার সাধারণ ন্যায়সংগত দায় ও নয়।
২. টর্টের অপরাধ দেওয়ানী মামলা হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, ফৌজদার অপরাধের মামলা ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে পরিচিত।
৩. টর্ট অপরাধের ক্ষেত্রে মামলা আনয়নকারী পক্ষকে বলা হয় বাদী এবং বিরুদ্ধ পক্ষকে বলা হয় বিবাদী বা প্রতিবাদী। অন্যদিকে, ফৌজদারী অপরাধ আনয়নকারী পক্ষ ফরিয়াদী বা অভিযোগকারী এবং বিরুদ্ধ পক্ষ আসামী হিসেবে পরিচিত।
৪. টর্ট অপরাধের ক্ষেত্রে বাদীকে প্রমাণ করতে হয় যে, বিবাদী তার আইনগত অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে। অন্যদিকে, ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে প্রমাণ করতে হয় যে আসামী তার উপর দণ্ডনীয় অপরাধ করেছে।
৫. টর্ট অপরাধের প্রতিকার পাওয়া যায় সাধারণতঃ আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে। অন্যদিকে, ফৌজদারী অপরাধের জন্য দণ্ডবিধির বিধান মতে অপরাধীর শাস্তি দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কোন প্রতিকার পায় না।
৬. টর্ট অপরাধের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ছাড়াও প্রয়োজন বোধে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় কিংবা প্রতিরোধ বা বাধা -নিষেধের সুযোগও দেয়া হয়।
অন্যদিকে, ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাস্তি দেয়া হয়, যেমন বেত্রদণ্ড, কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড, যদিও আর্থিক জরিমানাও একটি শাস্তি হিসেবে দেয়া হয়ে থাকে।
৭. টর্টের অভিযোগ প্রমাণিত হলে অপকর্মকারী দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়। অন্যদিকে, ফৌজদারী অপরাধ প্রমাণিত হলে অপকর্মকারী অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত হয়।
৮. টর্টের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিকে সাধারণতঃ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। অন্যদিকে, ফৌজদারী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি পেতে হয়।