গতানুগতিক পাঠক্রম (Traditional Curriculum) :
গতানুগতিক পাঠক্রম হল একটি শিক্ষার পদ্ধতি যা শিক্ষক-কেন্দ্রিক। এর অর্থ হল শিক্ষক জ্ঞানকে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রেরণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের ভূমিকা হল জ্ঞান আয়ত্ত করা। গতানুগতিক পাঠক্রমের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুতে দক্ষতা অর্জন করা।যে ধরনের পাঠক্রম প্রধানত পাঠ্যপুস্তককে কেন্দ্র করে রচিত হয়। কেবলমাত্র কতকগুলি তাত্ত্বিক জ্ঞানকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাকে গতানুগতিক বা বিষয়মুখী পাঠক্রম বলে। ভাষা, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, ভূগােল ইত্যাদি জ্ঞানের বিষয়ের ওপর আলাদা আলাদা পাঠ্যসূচি নির্দিষ্ট করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই পাঠ্যসূচিগুলি বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শমতাে পৃথকভাবে অনুশীলন করে। এটাই হল বিষয়মুখী পাঠক্রমের মূল বৈশিষ্ট্য।
আধুনিক পাঠক্রম (Modern Curriculum) :
আধুনিক পাঠক্রম হল শিক্ষার একটি পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব জ্ঞান এবং দক্ষতা বিকাশে উৎসাহিত করে। এটি শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক, যার অর্থ এটি শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং আগ্রহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। আধুনিক পাঠক্রমের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের বাস্তব জগতের সমস্যা সমাধানে সক্ষম করে তোলা। আধুনিক পাঠক্রমে, শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব জ্ঞান এবং দক্ষতা বিকাশে উৎসাহিত করা হয়। পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের চাহিদা এবং আগ্রহের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের উপর জোর দেয়। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, যেমন সমস্যা সমাধান, গবেষণা এবং প্রকল্প কাজ।
এই পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বাস্তব জগতে প্রয়োগ করতে শেখায়। পাঠক্রমগুলি বাস্তব জগতের সমস্যা সমাধানের সাথে সম্পর্কিত বিষয়বস্তু এবং কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্বের অনেক দেশে আধুনিক পাঠক্রমের দিকে ঝুঁকছে। এটি শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক এবং বাস্তব জগৎ-সম্পর্কিত করে তুলতে সাহায্য করছে।
গতানুগতিক ও আধুনিক পাঠক্রমের মধ্যে পার্থক্যঃ
গতানুগতিক পাঠক্রম এবং আধুনিক পাঠক্রম হল শিক্ষার দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। নিচে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-
১. গতানুগতিক অর্থে পাঠক্রম বলতে পাঠ্য সূচি বা পাঠ্যতালিকাকে বোঝায়। অর্থাৎ বিশেষ শিক্ষাস্তরের জন্য যে পাঠ্যবিষয় নির্বাচন করা হয় সেগুলির সমবায়ই হল পাঠক্রম। অন্যদিকে, নিজেদের স্বার্থে শিক্ষার্থীরা শিক্ষালয় পরিবেশে শিক্ষকের পরিচালনায় যা শেখে বা অর্জন করে তাই আধুনিক অর্থে পাঠক্রম। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সফল রূপায়ণে বিচিত্রময় অভিজ্ঞতার সমষ্টি হল আধুনিক অর্থে পাঠক্রম।
২. গতানুগতিক পাঠক্রম একটি কেন্দ্রীভূত পদ্ধতি যা জ্ঞানকে একমুখীভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রেরণ করে। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রম একটি শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক পদ্ধতি যা শিক্ষার্থীদের তাদের নিজস্ব জ্ঞান এবং দক্ষতা বিকাশে উৎসাহিত করে।
৩. গতানুগতিক পাঠক্রমের বিষয়বস্তু কেবল শ্রেণিকক্ষে অনুশীলন করা হয়। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রমের বিষয়বস্তু শ্রেণিকক্ষের মধ্যে এবং শ্রেণীকক্ষের বাইরে সর্বত্রই অনুশীলন করা হয়।
৪. গতানুগতিক পাঠক্রম মূলত শ্রেণিকক্ষের মধ্যে জ্ঞানমূলক বিষয় অনুশীলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রম শ্রেণিকক্ষের ভিতরে ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশমূলক কার্যাবলির সঙ্গে যুক্ত।
৫. গতানুগতিক পাঠক্রম যান্ত্রিক ও পরীক্ষা ওপর নির্ভর। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রম সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে মূল্যায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
৬. গতানুগতিক জাতীয় পাঠক্রমে, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির বিশেষ কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, আধুনিক জাতীয় পাঠক্রমে, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৭. গতানুগতিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর চাহিদা, আগ্রহ, মানসিক ক্ষমতা ইত্যাদির ওপর কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর চাহিদা, আগ্রহ, মানসিক ক্ষমতা ইত্যাদি এবং তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৮. গতানুগতিক পাঠক্রমে শিক্ষার্থীর কোন স্বাধীনতা থাকে না। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রমের শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে বিষয়বস্তু নির্বাচন করতে পারে।
৯. গতানুগতিক পাঠক্রমের কোন পরিবর্তন হয় না। তাই অপরিবর্তনীয়, অনমনীয়, গতিহীন। অন্যদিকে, আধুনিক পাঠক্রম পরিবর্তনশীল। তাই নমনীয় ও গতিশীল।