সনাতনী যুক্তিবিদ্যা (Traditional Logic):
সনাতনী যুক্তিবিদ্যা ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা উভয়েরই আলোচনার বিষয়বস্তু যুক্তির বৈধতা নির্ণয়। সনাতনী যুক্তিবিদ্যা যুক্তি প্রয়োগ করে ভাষার মাধ্যমে। সনাতনী পদ্ধতিতে যুক্তি প্রয়োগ করতে গেলে বৃহৎ বাক্য লেখতে যেমন সময় লাগে তেমনি সেগুলো অনুধাবন করতেও সময় বেশি লাগে। আপনারা আগেই জেনেছেন যে সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় সীমিত পরিসরে যুক্তির পদের স্থানে গ্রাহক প্রতীকের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। কিন্তু প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় যুক্তিবাচ্যের পদ ও যোজক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপকভাবে প্রতীকের ব্যবহার করা হয়।
প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা (Symbolic Logic):
যে যুক্তিবিদ্যা বিশেষ ধরনের প্রতীকতার প্রবর্তন করে প্রতীকের ব্যবহার দ্বারা যুক্তির প্রকাশ ও মূল্যায়নকে সহজতর করে। তাকেই প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা বলে। প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা কে গাণিতিক যুক্তিবিদ্যা নামেও অভিহিত করা হয়। প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় প্রতীকের মাধ্যমে বিভিন্ন যুক্তিকে প্রকাশ করা হয়। এরিস্টটল প্রথম সহানুমানকে প্রতীকের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে জর্জ বুল যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহার করে একে অন্য এক মাত্রা দেন। এরপর ফ্রেগে, রাসেল, হোয়াইটহেড, কপি প্রমুখের মাধ্যমে প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।
সনাতনী ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার মধ্যে পার্থক্যঃ
সনাতনী যুক্তিবিদ্যার পরিণত অবস্থাই হল প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা। তাই সনাতনী ও প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার মধ্যে পার্থক্য গুণগত নয় পরিমাণগত। পার্থক্য নিম্নরূপ-
১. সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় প্রতীকের ব্যবহার করা হয় সীমিত পরিসরে। অন্যদিকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় যুক্তিবিদগণ প্রতীক ব্যবহার করেন ব্যাপক পরিসরে।
২. সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় ব্যাপকভাবে ধ্বনিজ্ঞাপক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় ধারণা জ্ঞাপক চিহ্নের ব্যবহার অধিক।
৩. সনাতনী বা সাবেকী যুক্তিবিদ্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ হলো একটি বৌদ্ধক ও মননশীল প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে যান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
৪. সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় ক্ষেত্রে ভাষার দ্ব্যর্থকতা, অস্পষ্টতা, বহু অর্থবোধকতা, রূপকার্থকতা ইত্যাদি তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহারের কারণে এসব হওয়ার কোনো সুযোগই থাকে না।
৫. সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় ভাষার অস্পষ্টতার জন্য যুক্তির ক্ষেত্রে অনেক বেশি অনুপপত্তি ঘটে। অন্যদিকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যায় প্রতীক ব্যবহারের মাধ্যমে বক্তব্যের মূল বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়া যায়; ফলে অনুপপত্তি ঘটার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না।
৬. সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় অনেক বড় ও জটিল যুক্তি থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ কষ্টসাধ্য ও দুরূহ। অন্যদিকে, প্রতীকের সাহাযে ̈ অনেক বড় যুক্তির আকার সহজে অনুধাবন করা যায় এবং অতি সহজেই সিদ্ধান্ত প্রতিপাদন করা যায়।
৭. সনাতনী যুক্তিবিদ্যায় আরোহ ও অবরোহ উভয় প্রক্রিয়াই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যার ক্ষেত্রে অবরোহ যুক্তির প্রভাব খুব বেশি। আরোহ যুক্তির কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।