প্রস্বেদন (Transpiration) :
উদ্ভিদ মাটি থেকে যে পরিমাণ পানি শোষণ করে তার কিছু অংশ বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ পানি বাষ্পাকারে বের হয়। তবে কিছু পানি উদ্ভিদদেহ থেকে পানি হিসেবেই বের হয়। উদ্ভিদদেহ থেকে যে প্রক্রিয়ায় পানি বাষ্পাকারে বের হয় তাকে প্রস্বেদন বলা হয়। প্রস্বেদন হচ্ছে একটি শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উদ্ভিদের পাতা ও অন্যান্য বায়বীয় অঙ্গ হতে জল বাষ্পাকারে বের হয়ে যায়।
মূল এবং ফুলের মাধ্যমেও প্রস্বেদন বা বাষ্পমোচন হতে পারে। উদ্ভিদ তার মূল দিয়ে জল শোষণ করে থাকে এবং পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষ দুটোর-স্ফীতি ও শিথিল অবস্থা পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বেশিরভাগ প্রস্বেদন সম্পন্ন হয়।
বাষ্পীভবন (Vaporization) :
কোন তরলকে তাপ প্রদান করে ঐ তরল পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বাষ্পীভবন বলে। বাষ্পীভবন হ’ল তরল পর্যায় থেকে বাষ্প পর্যায়ে রূপান্তর । বাষ্পীভবন হবার সময় প্রদত্ত চাপে স্ফুটনাংকের নীচের তাপমাত্রায় ঘটে। বাষ্পীভবন পৃষ্ঠতলে ঘটে। বাষ্পীভবন তখনই ঘটে যখন কোনও পদার্থের বাষ্পের আংশিক চাপ ভারসাম্যের বাষ্পের চাপের চেয়ে কম থাকে । সাধারণত দুভাবে বাষ্পীভবন সংঘটিত হয়। যথা- (ক) স্বত:বাষ্পীভবন (Evaporation) (খ) স্ফুটন (Boiling)।
বাষ্পীভবনের উদাহরণ- মাটির কলসীর গায়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। এসব ছিদ্র দিয়ে পানি কলসীর উপরীতলে এসে পৌছে এবং পানি বাষ্পায়ন ঘটে। বাষ্পায়নের প্রয়োজনীয় সুপ্ততাপ কলসীর পানি হতে গৃহীত হয় । ফলে তাপ হারিয়ে কলসীর পানি শীতল হয়।
প্রস্বেদন ও বাষ্পীভবনের মধ্যে পার্থক্যঃ
প্রস্বেদন ও বাষ্পীভবন উভয়ই তরল থেকে বাষ্পের রূপান্তরের প্রক্রিয়া। তবে, তাদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। প্রস্বেদন ও বাষ্পীভবনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। উদ্ভিদদেহ থেকে যে প্রক্রিয়ায় পানি বাষ্পাকারে বের হয় তাকে প্রস্বেদন বলা হয়। অন্যদিকে, কোন তরলকে তাপ প্রদান করে ঐ তরল পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বাষ্পীভবন বলে।
২। প্রস্বেদন হল উদ্ভিদের পাতা, কান্ড, ফুল এবং ফলের মাধ্যমে জল বাষ্পীভবনের প্রক্রিয়া। এটি একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যা উদ্ভিদের শ্বাসকষ্টের সাথে সম্পর্কিত। প্রস্বেদন উদ্ভিদের শরীর থেকে অতিরিক্ত জল অপসারণ করে এবং ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে, বাষ্পীভবন হল যেকোনো তরল থেকে বাষ্পের রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এটি একটি শারীরিক প্রক্রিয়া যা তাপমাত্রা এবং চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়। বাষ্পীভবন জলচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প যোগ করে, যা বৃষ্টি, তুষার এবং অন্যান্য বৃষ্টিপাতের আকারে ফিরে আসে।
৩। প্রস্বেদন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, বাষ্পীভবন একটি ভৌত প্রক্রিয়া।
৪। প্রস্বেদন প্রক্রিয়াটি প্রোটোপ্লাজম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে, বাষ্পীভবনের ব্যাপারে প্রোটোপ্লাজমের কোন ভূমিকা নেই।
৫। প্রস্বেদন প্রক্রিয়াটির ফলে সজীব উদ্ভিদের দেহাভ্যন্তর থেকে বাষ্পাকারে পানি বের হয়। অন্যদিকে, বাষ্পীভবন যেকোনো উন্মুক্ত জলাধার থেকে পানি বাষ্পাকারে উঠে বায়ুমণ্ডলে মিশে যায়।
৬। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার ফলে উদ্ভিদদেহে চাপের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, বাষ্পীভবন জলাধারে চাপের সৃষ্টি হবে না।
৭। প্রস্বেদনে অংশগ্রহণকারী অঙ্গের উপরিতলে আর্দ্রতা দেখা দেয়। অন্যদিকে, যে জলাধার থেকে বাষ্পীভবন হয় তার উপরিভাগে শুষ্কতা দেখা দেয়।