Site icon Parthokko.com.bd | পার্থক্য | Difference Between

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (Tropical Cyclone):

নিরক্ষরেখার উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যেসব ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় তাদের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে। উভয় গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ৫ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি উত্তর ও দক্ষিন অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অধিকাংশ ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত সংঘটিত হয়। এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে অত্যাধিক উষ্ণতার জন্য সমুদ্রপৃষ্টের উপরিভাগের বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়। ফলে এই অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। তখন চারপাশের অপেক্ষাকৃত শীত ও ভারী বায়ু প্রবল গতিবেগে কুন্ডলির আকারে ঘুরতে ঘুরতে এইরূপ গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ধেয়ে আসে।

ক্রান্তীয় অঞ্চলে এইরূপ প্রবল গতি সম্পন্ন কেন্দ্রমুখী ঘূর্নায়মান ঊর্দ্ধগামী বায়ু প্রবাহকে ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত বলে। ক্রান্তীয় ঘূর্নিঝর বা ঘূর্নবাতের কেন্দ্রে গভীর নিম্নচাপের উপস্থিতি দেখা যায়। যা ক্যাটাগরি -১ ঘূর্নবাতের ক্ষেত্রে ৯৮০ মিলিবার মতো ও ক্যাটাগরি -৫ ঘূর্নবাতের ক্ষেত্রে ৯২০ মিলিবারে নেমে যায়।

নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত (Temperate Cyclone):

নিরক্ষরেখার উভয় ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৬৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী মধ্য-অক্ষাংশে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের মিলনের ফলে যে ঘূর্নবাতের সৃষ্টি হয় তাকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়; ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু এবং মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বায়ুর পরস্পর মুখোমুখি এসে মিলিত হয়ে এক বায়ুপ্রাচীরের সৃষ্টি করে যার ফলে উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু উপরে উঠে ঝড় – বৃষ্টি ঘটায় তাকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বলে। মধ্য- অক্ষাংশে সংঘটিত হয় বলে একে মধ্য- অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাত বলে। উপক্রান্তীয় অঞ্চলে মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল ও শুষ্ক ভারী বায়ু পুঞ্জের সঙ্গে ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ুপুঞ্জের সংঘর্ষ হয়।

উষ্ণ ও শীতল বায়ুপুঞ্জের মিলনস্থলে বা সীমান্তে শীতল ও ভারী বায়ু উষ্ণ বায়ুর স্থান দখল করে ফলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তাতে হালকা জলীয় বাষ্পপূর্ন উষ্ণ বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে উদ্ধে উঠে বৃষ্টি ঘটায় । এভাবে নাতিশীতোষ্ণ ঘুর্নবাতের উদ্ভব হয়। এটি তরঙ্গ ঘূর্নবাত নামেও পরিচিত।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্যঃ

ক্রান্তীয় অঞ্চলে ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত এবং মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত নামে পরিচিত। ভিন্ন অঞ্চলে সৃষ্ট হওয়ায় ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

১। নিরক্ষরেখার উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যেসব ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় তাদের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত বলে। অন্যদিকে, নিরক্ষরেখার উভয় ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৬৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যবর্তী মধ্য-অক্ষাংশে বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের মিলনের ফলে যে ঘূর্নবাতের সৃষ্টি হয় তাকে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত বলা হয়।

২। ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত ক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণত 5 ডিগ্রি থেকে 20 ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থান করে। অন্যদিকে, নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত 35 ডিগ্রি থেকে 60 ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থান করে।

৩। ক্রান্তীয় ঘূর্নবাতের ব্যাস ১০০ কিমি থেকে ৮০০ কিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে । অন্যদিকে, নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত সর্বাধিক ৩০০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

৪। গ্রীষ্ম ও শরৎ কালে বেশি ক্রান্তীয় ঘূর্নিঝর সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, মূলত শীতকালে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতের আবির্ভাব ঘটে।

৫। ক্রান্তীয় ঘূর্নবাতের কেন্দ্র ও বহির্ভাগের মধ্যে চাপের পার্থক্য অনেক বেশি হয় ফলে চাপ ঢাল খাড়া হয়। অন্যদিকে, নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতে মৃদুচাপ ঢাল বিরাজ করে।

৬। ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্নবাতে কিউমূলোনিম্বাস মেঘে আকাশ ঢাকা থাকে বলে কয়েক ঘন্টার জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতে নিম্বোস্ট্রাটাস মেঘ থাকে বলে অনেক দিন ধরে হালকা বৃষ্টিপাত হয়।

৭। ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত ক্রান্তীয় মন্ডলের উষ্ণ সমুদ্র বক্ষে উৎপত্তি লাভ করে। অন্যদিকে, নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাত স্থলভাগ ও জলভাগ উভয় অঞ্চলে সৃষ্টি হয়।

৮। ক্রান্তীয় ঘূর্নবাতে সমচাপ রেখাগুলি এককেন্দ্রীক, বৃত্তাকার, ঘনসন্নিবিষ্ট অর্থাৎ সমপ্রেষরেখা গুলি সম দূরত্বে অবস্থান করে। অন্যদিকে, নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতে সমচাপরেখা ফানেল বা V আকৃতির হয়।

Exit mobile version