ঊর্ধ্বমুখী সংবহন:
জাইলেমের মাধ্যমে উদ্ভিদ দেহে রসের ঊর্ধ্বমুখী পরিবহন হয়। ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পাতায় তৈরি খাদ্য রসের নিম্নমুখী পরিবহন হয়। তাই খাদ্য পরিবহনে জাইলেম ও ফ্লোয়েম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রক্রিয়ায় মূলরোম দ্বারা শোষিত জল ও খনিজ লবণ জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে উদ্ভিদের ঊর্ধ্বমুখে বাহিত হয়ে পাতায় পৌঁছায় তাকে কোষ রসের উৎস্রোত বা ঊর্ধ্বমুখী সংবহন বলে।
বিজ্ঞানী স্টোফেন ও হেলস ( 1727 ) এই মতবাদ প্রণয়ন করেন যে, উদ্ভিদের মূলরোমের মাধ্যমে কোষ রস কর্টেক্স কোষ সমূহে প্রবেশ করে, এর ফলে এক প্রকার অভিস্রাবন চাপের সৃষ্টি হয়। এই চাপকে মূলজ চাপ বলে।
বিজ্ঞানী J.C Bose ( 1923 ) এই মতবাদ প্রণয়ন করেন। তার মতে কর্টেক্স কোষ সমূহের পর্যায়ক্রমে সংকোচন ও প্রসারণ ঘটে। এই সংকোচন ও প্রসারনের ফলে রসের উৎস্রোত ঘটে।1809 সালে এই মতবাদটি প্রণয়ন করা হয়। এর মতে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের জন্য রসের উৎস্রোত ঘটে।
নিম্নমুখী সংবহনঃ
পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য বস্তু ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। ফ্লোয়েম কলার অন্তর্গত সীভনলের নলাকার কোষ গুলি একটির উপর একটি খাড়া ভাবে অবস্থান করে একটি অবিছিন্ন অঙ্গ গঠন করে। সীভনলের দুটি কোষের মধ্যবর্তী অনুপ্রস্থ প্রাচীর চালুনির মত ছিদ্রবহুল হওয়ায় ঐ ছিদ্রের মাধ্যমে তরল খাদ্য বস্তু সহজেই বাহিত হতে পারে। সীভনল থেকে খাদ্য রস ব্যপন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন সঞ্চয় কোষে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে নিম্নমুখী সংবহন হয়ে থাকে।
ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী সংবহনের মধ্যে পার্থক্য:
পাতায় উৎপন্ন তরল খাদ্য বস্তু ফ্লোয়েম কলার মাধ্যমে নীচের দিকে প্রবাহিত হয়। ঊর্ধ্বমুখী সংবহন ও নিম্নমুখী সংবহনের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। ঊর্ধ্বমুখী সংবহন মূলত জাইলেম কলার জাইলেম বাহিকার মাধ্যমে ঘটে। অন্যদিকে নিম্নমুখী সংবহন মূলত ফ্লোয়েম কলার সীভ নলের মাধ্যমে ঘটে।
২। ঊর্ধ্বমুখী সংবহনে জল ও জলে দ্রবীভূত খনিজ লবণ মাটি থেকে পাতায় পৌঁছায়। অন্যদিকে সংবহনে পাতায় তৈরি তরল খাদ্য রস পাতা থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে যায়।
৩। বিভিন্ন রকম চাপ ( শোষণ চাপ, বায়বীয় চাপ, মূলজ চাপ প্রভৃতি ) ঊর্ধ্বমুখী সংবহনকে নিয়ন্ত্রন করে। অন্যদিকে নিম্নমুখী সংবহনকে কোনোরকম চাপ নিয়ন্ত্রণ করে না।
৪। ঊর্ধ্বমুখী সংবহন বাষ্পমোচনের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। অন্যদিকে নিম্নমুখী সংবহন বাষ্পমোচনের সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত নয়।