আবহবিকার (Weathering):
আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন উষ্ণতা, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরের খনিজ একই স্থানে থেকে যান্তিক এবং রাসায়নিক ভাবে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে। অর্থাৎ আবহবিকার শব্দটি এসেছে আবহাওয়া (Weather) থেকে। আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের (যেমন—উয়তা, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত, এবং বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস) সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চূর্ণবিচূর্ণ এবং রাসায়নিক পদ্ধতিতে বিয়ােজিত হলে, তাকে আবহবিকার (weathering) বলে। আবহবিকার সংঘটিত হয়- যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক পদ্ধতিতে। তাই আবহবিকারকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১. যান্ত্রিক আবহবিকার,
২. রাসায়নিক আবহবিকার ও
৩. জৈবিক আবহবিকার
ক্ষয়ীভবন (Deterioration):
আবহবিকার এর মাধ্যমে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়। কিন্তু ওই অংশগুলো সেখানথেকে অপসারিত হয় না। ক্ষয়ীভবনের সময় আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যথা- বৃষ্টিপাত, হিমবাহ প্রবাহ বা বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির প্রভাবে শিলার ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটে, যার ফলে মূল শিলাস্তরের অভ্যন্তর ভাগ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে । ক্ষয়ীভবনের ফলে ভূমিরূপের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও শিলার মূল বৈশিষ্ট্য যেমন- গঠন, খনিজের বিন্যাস প্রকৃতি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে না ।
এই ধরনের অপসারণ পদ্ধতিকে ক্ষয়ীভবন বলা হয়। একস্থান থেকে অন্যস্থানে আবহবিকারগ্রস্ত পদার্থ অপসারিত হয়ে ক্ষয়ীভবন হয়। এটি আবহবিকারের পূর্বশর্ত নয় বা এই কাজে সাহায্য করে না। মূলত প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এটি অত্যন্ত দ্রুত গতির প্রক্রিয়া।
আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের মধ্যে পার্থক্যঃ
আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে। আবহবিকার ও ক্ষয়িভবনের মধ্যে পার্থক্য নিচে দেখানো হয়েছে-
১। আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন উষ্ণতা, আদ্রতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরের খনিজ একই স্থানে থেকে যান্তিক এবং রাসায়নিক ভাবে চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়োজিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে আবহবিকার বলে। অন্যদিকে, আবহবিকার জনিত শিলাচূর্ণের প্রাকৃতিক বাহিত শক্তির দ্বারা অপসারণ কে ক্ষয়ীভবন বলে l
২। বায়ুর উপাদানগুলি অর্থাৎ উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ ইত্যাদির সন্মিলিত প্রভাবে আবহবিকার প্রক্রিয়া ঘটে থাকে। অন্যদিকে, প্রবাহমান নানা প্রাকৃতিক শক্তি, যথা- নদীপ্রবাহ, জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতির মাধ্যমে ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
৩। আবহবিকার ধীর প্রক্রিয়ায় সংঘটিত ভূমিরুপ ভাস্কর্যের প্রথম প্রকৃয়া। অন্যদিকে, ক্ষয়ীভবন খুব দ্রুত সংঘটিত ভূমিরুপ ভাস্কর্যের পরবর্তী প্রকৃয়া l
৪। আবহবিকারের ফলে চূর্ণীকৃত শিলার টুকরো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ছাড়া অপসারিত বা স্থানান্তরিত হয় না, নিজের স্থানেই অবস্থান করে । আবহবিকারের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত নয়। অন্যদিকে, ক্ষয়ীভবনের ফলে চূর্ণীকৃত শিলা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, একস্থানে থাকে না । অর্থাৎ ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত।
৫। আবহবিকারের প্রধান নিয়ন্ত্রক হল উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, মূল শিলার বৈশিষ্ট ইত্যাদি। অন্যদিকে, ক্ষয়ীভবন বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত, হিমবাহ, সমুদ্র তরঙ্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়l