আর্দ্র কৃষি:
সেচের সাহায্য ছাড়া নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাতের (150 সেমির বেশি) ওপর নির্ভর করে যে কৃষিকাজ করা হয়, তাকে আর্দ্র কৃষি বলে। উভয় গােলার্ধে 10° অক্ষাংশ থেকে প্রায় 25° অক্ষাংশের মধ্যে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবান্বিত দেশগুলিতে আর্দ্র কৃষি পরিলক্ষিত হয়। তবে ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই পদ্ধতিতে কৃষিকাজ প্রায় 30° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। কৃষক নিজের প্রয়ােজন মেটানাের জন্য এই ধরনের কৃষিতে যােগ দেয়। কৃষকের দক্ষতা পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত।
শুষ্ক কৃষি:
পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় না এবং জলসেচের কোনরকম সুবন্দোবস্ত নেই, সেখানে নামমাত্র বৃষ্টির জলকে কাজে লাগিয়ে শুষ্ক পরিবেশে যে কৃষিকাজ করা হয়, তাকে শুষ্ক কৃষি বলে। শুষ্ক মাটিযুক্ত এলাকা, যেখানে বৃষ্টিপাতের বার্ষিক গড়মাত্রা ২০সে.মি এর কম, মাটির আর্দ্রতাও খুবই সীমাবদ্ধ, এবং সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই, সেখানে নির্দিষ্ট কৌশল/পদ্ধতি দ্বারা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষবাদ করা হয়। এ চাষাবাদের মূলত দুর্দান্ত সমভূমি অঞ্চল যেমন, উত্তর আমেরিকার যেমন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনায়, এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোএশিয়ান অঞ্চল (যে অঞ্চলে শস্য উৎপাদনের হার বেশী হয়), অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলগুলোতে প্র্যাকটিস হয়। এবং ভারতেও এই পদ্ধতির আরোপ প্রচুর।
আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির মধ্যে পার্থক্য:
পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় না এবং জলসেচের কোনরকম সুবন্দোবস্ত নেই। আর্দ্র কৃষি ও শুষ্ক কৃষির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। আর্দ্র কৃষিতে বার্ষিক বৃষ্টি অনুযায়ী এক ফসলি বা দ্বিফসলি চাষ হয়। অন্যদিকে শুষ্ক কৃষিতে সামান্য বৃষ্টিতে কেবল এক ফসলি চাষ হয়।
২। আর্দ্র কৃষিতে হেক্টরপ্রতি ফসলের ফলন অনেক বেশি হয়। অন্যদিকে শুষ্ক কৃষিতে হেক্টরপ্রতি ফসলের ফলন অনেক কম হয়।
৩। আর্দ্র কৃষির প্রধান ফসল হলো ধান। এছাড়াও পাট, আখ, চা, রাবার প্রভৃতি চাষ করা হয়। অন্যদিকে শুষ্ক কৃষির প্রধান ফসল হলো মিলেট। এছাড়াও ভুট্টা, পশুখাদ্য চাষ হয়।
৪। আর্দ্র কৃষিতে যথাসম্ভব আধুনিক কৃষিপদ্ধিতে চাষাবাদ করা হয়। অন্যদিকে শুষ্ক কৃষিতে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি মেনে যত্নসহকারে তেমন চাষ হয় না।