শব্দ
একটি একক ধ্বনি দিয়ে কখনো কখনো ভাব প্রকাশ করা গেলেও মানবমনের অসংখ্য বিচিত্র ভাব প্রকাশের জন্য একক ধ্বনি যথেষ্ট নয়। তাই ভাষায় উপস্থিত ধ্বনিগুলিকে বিভিন্ন সমন্বয়ে সাজিয়ে ধ্বনির সমষ্টি তৈরি করা হয়। এই সমষ্টিগুলি একটি করে অর্থ প্রকাশ করে। এই ধরণের ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। তবে একটি একক ধ্বনিও শব্দ হতে পারে, যদি তা দিয়ে কোনো অর্থ প্রকাশ করা যায়।
যেমনঃ ক্+অ+ল্+অ+ম্+অ= কলম।
পদ
শব্দ এবং ধাতু বিভক্তি-সহযোগে বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত হলে তাকে পদ বলা হয়।
এখানে বিভক্তি জিনিসটি আসলে কী, তা একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। বিভক্তি এক প্রকার ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ, যা শব্দ ও ধাতুর শেষে যুক্ত হয়ে বাক্যের মধ্যে তার ভূমিকা, পরিচয় ও বাক্যের অন্যান্য অংশের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করে। অর্থাৎ বাক্যের মধ্যে একটি শব্দ ঠিক কী কাজ করছে, অন্য পদগুলির সাথে তার সম্পর্ক কী, এইসব ব্যাপার বিভক্তির সাহায্যে বোঝা যায়। তবে এমন একটি বিভক্তি আছে যার মধ্যে কোনো ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি থাকে না। অর্থাৎ চিহ্নহীন বিভক্তি। ব্যাকরণে একে শূন্য বিভক্তি বলে। মোট কথা বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি শব্দই এক একটি পদ।
যেমন: রাম শহরে থাকে।
শব্দ ও পদের মধ্যে পার্থক্যঃ
১. শব্দ হলো বাক্য গঠনের মূল উপাদান যা এক বা একাধিক বর্ণ ও অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে বাক্যে ব্যবহৃত প্রতেকটি শব্দকে এক একটা পদ বলে।
২. শব্দ বিভক্তি যুক্ত হয়ে পদে পরিনত হলে তবেই বাক্যে স্থান লাভের যোগ্যতা পায়। তাই বাক্যে স্থান লাভের যোগ্যতা পদ পেলেও শব্দ পায়না।অর্থাৎ বলা যায় প্রতিটি নামপদই মূলত শব্দ ; কিন্তু কেবল শব্দ কখনো পদ নয়।
৩. শব্দ সবসময় একা। কারও সাথে তার সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে বাক্যের পদগুলি অন্য পদের সাথে সম্পর্কিত থাকে।
৪. শব্দ কেবল অভিধানে পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে পদ বাক্যে ব্যবহৃত হয়। তাই আমরা যে সব কথা বলি, তাতে পদ ব্যবহার করি।
৫. শব্দের সাথে বিভক্তি যুক্ত থাকে না। পক্ষান্তরে পদে বিভক্তি যুক্ত থাকে।