কাজ (Work):
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ‘কাজ’ ও ‘শক্তি’ বহুল ব্যবহৃত দুটি শব্দ। কৃষক মাঠে কাজ করে ফসল উৎপাদন করেন, শ্রমিক কারখানায় কাজ করেন। শিল্পী ক্যানভাসে প্রকৃতিকে তুলে ধরেন, বৈমাণিক বিমান চালিয়ে মানুষকে একমহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে স্থানান্তর করেন। আবার যার শক্তি বেশি সে বেশি কাজ করতে পারে এমন বিশ্বাস আমাদের সকলেরই আছে। যাদের শারিরীক সামর্থ্য বেশি তারা বেশি পরিশ্রম করতে পারে, বেশি সময় কাজ করতে পারে। সাধারণভাবে আমাদের ধারণার মধ্যে কাজ ও শক্তি সমার্থক শব্দ। যার শক্তি বেশি সে বেশি কাজ করতে পারে। কাজের সাথে শারীরিক সামর্থ্য সম্পর্কিত। তবে সকল কাজকে কাজ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। কাজের সাথে ফলাফল সম্পৃক্ত। কাজ সম্পন্নের পর ফলাফল পাওয়া না গেলে কাজ সার্থক হয়েছে বলা যাবে না। সারা বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে না পারলে সারা বছরে সম্পন্ন কাজ সফল হয় না। আমাদের বাস্তব জীবনের মতই পদার্থবিজ্ঞানেও কাজ সম্পন্ন তখনই হবে যখন কাজের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট পরিমাপযোগ্য ফলাফল পাওয়া যাবে। বস্তুর উপর বল প্রয়োগে যদি বস্তুর অবস্থায় পরিবর্তন ঘঠে তখন বল দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলা হবে। বল এবং বল প্রয়োগে সৃষ্ট সরণের গুণফল দ্বার কজের পরিমাপ করা হয়। কোনো একটি বস্তুকে ভুমি হতে উপরের দিকে উঠালে বস্তুটি অভিকর্ষীয় বলের বিরুদ্ধে কাজ করে। আবার উপর হতে কোন বস্তু ভুমিতে পতিত হলে বস্তুটি অভিকর্ষীয় বলের দিকে কাজ করে। উভয় ক্ষেত্রে বস্তুর সরণ ঘটেছে বলে কাজ সম্পন্ন হয়।
শক্তি (Energy):
পদার্থবিজ্ঞানে কাজ করার সামর্থ্যই হলো শক্তি। পদার্থবিজ্ঞানে কাজ ও শক্তির সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট অর্থ আছে। কাজ ও শক্তি পরস্পর পরিপূরক। কাজের পরিমাণ করে শক্তি নির্ণয় করা যায়। কোনো ব্যবস্থা দ্বারা সম্পন্ন কাজ পরিমাপ করে ঐ ব্যবস্থার শক্তি পরিমাপ করা যায়। পদার্থবিজ্ঞানে কাজ সম্পন্ন করতে হলে বলের প্রয়োজন হয়। আবার বল প্রয়োগে বস্তু গতি প্রাপ্ত হয়। গতির কারণে বস্তু গতিশক্তি লাভ করে। বস্তুর এই গতিশক্তিই বস্তু কর্তৃক সম্পন্ন কাজের পরিমাপক। বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে উপরে উঠালে যে কাজ সম্পন্ন হয় তা বস্তুতে বিভবশক্তি হিসাবে সঞ্চিত থাকে। কাজ পরিমাপের সাহায্যে স্থিতিশক্তির পরিমাপ করা যায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কাজ ও শক্তি পরস্পরের পরিপূরক মাত্র। কাজ ও শক্তির একক অভিন্ন। কোন ব্যবস্থার (system) শক্তি পরিমাপের মধ্যে দিয়ে ব্যবস্থাটি কি পরিমাণ কাজ করতে সমর্থ হবে তা নির্ণয় করা যায়। একই ভাবে একটি ব্যবস্থা কর্তৃক সম্পন্ন কাজ পরিমাপ করে ব্যবস্থাটির শক্তির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়। কাজ হচ্ছে শক্তির যান্ত্রিক স্থানান্তর। বস্তুর উপর বল প্রয়োগের ফলে বস্তুর অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে শক্তির যে স্থানান্তর ঘটে তাই হচ্ছে কাজ।
এক্ষেত্রে সম্পন্ন কাজ (W) = স্থানান্তরিত যান্ত্রিক শক্তি (E)
শক্তির একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে জীববিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে। আমরা খাদ্য গ্রহণ করি। খাদ্য হতে বিপাকীয় প্রক্রিয়া মানুষ শক্তি লাভ করে। এই শক্তি মানুষকে কাজ করার সামর্থ্য যোগায়। খাদ্য হতে মানুষ যে শক্তি গ্রহণ করে তা কাজ, তাপীয় শক্তি এবং ফ্যাট সঞ্চয়ে রূপান্তরিত হয়। যে ব্যক্তি বেশি শক্তি লাভ করে তার কাজ করার সামর্থ্য বেশি হয়। অর্থাৎ কাজ এবং শক্তি পরস্পরের পরিপূরক। শক্তির একক জুল।
কাজ ও শক্তির মধ্যে পার্থক্যঃ
১। কোনো বস্তুকে আপনি বল প্রয়োগ করে যেটুকু সরণ করতে পারবেন সেটাই আপনার কাজ। অন্যদিকে কোনো বস্তুর উপর আপনি কত হারে বল প্রয়োগ করছেন সেই হার টাই আপনার শক্তি।
২। আপনি যদি কোনো বস্তুকে ২ কি.মি. ঘুরিয়ে এনে আবার আগের অবস্থানে রেখে দেন তাহলে আপনার সরণ হবে শূন্য।সরণ শূন্য হলে আপনার কোনো কাজই হলো না।। আপনার কাজও হবে শূন্য।।
৩। প্রতিদিনের ব্যবহারে, মানুষের কর্মের চেয়ে শক্তির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কার্যকারিতার জন্য কতগুলি ক্ষমতা দরকার, তা নির্দেশ করতে প্রায় সব ডিভাইসগুলি শক্তি রেটিংগুলি ব্যবহার করে। কাজের জন্য মূল্যগুলি কম গুরুত্বের এবং বাস্তব জগতে সম্পর্কযুক্ত আরও কঠিন কারণ প্রকৃত ব্যবহারটি দৈর্ঘ্যের ভ্রমণ, দূরত্ব এবং ভ্রমণের উপর নির্ভর করে খুব পরিবর্তনশীল।
৪। শক্তি একটি বস্তুর দ্বারা আবিষ্ট কাজ তার ক্ষমতা পরিপ্রেক্ষিতে এইভাবে মাপা হয়। শক্তির একক তাই, কাজ, যে, joule এর যে হিসাবে একই. 1 জে শক্তির কাজ 1 joule তা করার প্রয়োজন আছে. কখনো কখনো একটি শক্তির মাপের একক নামক কিলোগ্রাম joule (kJ) ব্যবহৃত হয়. 1 kJ 1000 জে সমান।
৫। কাজ মানে শক্তির পরিবর্তন। মানে কৃতকাজ = গতিশক্তির পরিবর্তন সমবেগের ক্ষেত্রে গতিশক্তির পরিবর্তন হয় না তাই কোনো কাজ হয় না।