ব্যায়ামের উদ্দেশ্য কি এবং সুস্বাস্থ্য বলতে কি বোঝায় সে সম্বন্ধে একটু আলোচনা করা দরকার। ব্যায়ামের উদ্দেশ্য যদি দেহে অসাধারণ পুষ্টি ও অমিত শক্তিধারণ হয় এবং এ দুটি গুণ যার আছে তাকে যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলা হয়, তবে তা যোগ-ব্যায়াম দ্বারা লাভ করা সম্ভব নয়। আর যদি ব্যায়ামের উদ্দেশ্য হয় শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখা, দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বজায় রাখা এবং জরা-বার্ধক্যকে দূরে রাখা, তবে যোগ-ব্যায়াম অদ্বিতীয়। দ্বিতীয়টি যে ব্যায়ামের উদ্দেশ্য, আর যে ব্যক্তি এইসব গুণের অধিকারী তাকে যে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলা যায়, সে বিষয়ে কারো বোধহয় দ্বিমত থাকতে পারে না।
যোগ ও সাধারণ ব্যায়ামের মধ্যে পার্থক্যঃ
যদি ব্যায়ামের উদ্দেশ্য হয় শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখা, দেহে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বজায় রাখা এবং জরা-বার্ধক্যকে দূরে রাখা, তবে যোগ-ব্যায়াম অদ্বিতীয়। যোগ ও সাধারণ ব্যায়ামের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-
১। যোগ ব্যায়াম এর ফলে শরীরের প্রত্যেক হাড়ের ওপর সমানভাবে মাংসপেশী গঠিত হয়, তাই শরীরের নমনীয়তা বাড়ে। যোগে শারীরিক শক্তি খরচ অনেক কম হয়। অন্যদিকে, ব্যায়ামের প্রধান লক্ষ্য হল মাসল্ বা মাংসপেশীর পরিমাণ বাড়ানো। যার ফলে মাসল্-এর দৈর্ঘ কমে যায় ও নমনীয়তাও হ্রাস পায়। যখন আমরা ব্যায়াম করি, তখন শারীরিক শক্তি অনেকটা খরচ হয়।
২। যোগ ব্যায়াম এর ক্ষেত্রে যোগ আসনের সময় শরীর অনেক শিথিল থাকে ও শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তাটা কমে যায়। এতে হার্টের ওপর চাপ বা স্ট্রেস্ অনেকটা কমে যায়। অন্যদিকে, সাধারণ ব্যায়ামের ক্ষেত্রে এর ফলাফল ঠিক উল্টো। সাধারণ ব্যায়াম মাসল্-কে প্রসারিত করে। এতে রক্ত সঞ্চালনের গতি ও রক্তের চাপ বেড়ে যায়, যা হার্টের কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয় যেহেতু হার্টকে অনেক তাড়াতাড়ি পাম্প করতে হয়।
৩। যোগাভ্যাসের সময় শরীর শিথিল অবস্থাতে থাকে বা বিশ্রাম নেয়, কাজেই শ্বাস তন্ত্র বা রেসপিরেটরী সিস্টেমের কাজের চাপও কম থাকে। অন্যদিকে, সাধারণ ব্যায়ামে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ঘন ঘন সঞ্চালনে মাসল্ বা মাংসপেশীর অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়ে যায়। যা শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়িয়ে দেয় ও এর ফলে ফুসফুসকে অনেক বেশী কাজ করতে হয়।
৪। যোগ ব্যায়াম শরীরের প্রতিষেধক কোষগুলোর পরিমাণ ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে, রোগ প্রতিষেধক তন্ত্র বা ইমিউন সিস্টেমকে ভেতর থেকে শক্তির যোগান দেয়। অন্যদিকে, সাধারণ ব্যায়ামে; একই ভাবে কাজ করে, তবে এটা ব্যায়ামের প্রকৃতি, তীক্ষ্ণতা ও স্থায়িত্বের ওপর নির্ভর করে।
৫। যোগ শরীরে কর্টিসল্ হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। এই কর্টিসল্ হরমোন কোলেস্টেরল থেকে তৈরী হয় এবং এই হরমোন স্ট্রেস্ বা চাপ বাড়ায়। অন্যদিকে, সাধারণ ব্যায়ামের ফলে শরীরে কর্টিসল্-এর পরিমাণ বেড়ে যায় কারণ, শরীর ব্যায়াম করাকে স্ট্রেস্ হিসাবে নেয়।
৬। দেহের স্বাভাবিক গঠন, পুষ্টি ও শক্তিলাভ যোগ-ব্যায়াম দ্বারা সম্ভব কিন্তু স্ফীত পেশী ও অমিত শক্তিলাভ যোগ-ব্যায়াম দ্বারা সম্ভব নয়।