যাকাত ও সদকাহ এর মধ্যে পার্থক্য

যাকাত (Zakat):

যাকাত (আরবি: زكاة‎‎ zakāt, “যা পরিশুদ্ধ করে”, আরও আরবি: زكاة ألمال‎‎, “সম্পদের যাকাত”) হলো ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।

যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও পরিচ্ছনতা। যাকাত যেহেতু অর্থসম্পদকে পুঁজিবাদের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করে, মানুষের মন-মস্তিস্ককে গর্ব-অহংকার, লোভ-লালসা ও কৃপনতার মলিনতা থেকে পরিচ্ছন্নতা রাখে। নিজের উপার্জিত সম্পদে সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর দাবী-দাওয়া পূরণে উৎসাহ যোগায় এজন্য ইসলামের এই তৃতীয় স্তম্ভে নামকরণ হয় যাকাত। শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত পরিমান সম্পদ মুসলমান গরীবকে আল্লাহর ওয়াস্থে পুরোপুরি মালিক বানিয়ে দেয়াকে যাকাত বলে।
ধনি সম্পদশালী ব্যাক্তিরা মনে করেন যে যাকাতের দ্বারা সম্পদ কমে যায় তা নিছক ভুল ধারণা। কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ওয়াদা করেছেন যে,‘যাকাত আদায়ের ফলে তিনি বান্দার সম্পদ দ্বিগুন করে দিবেন’।

যাকাত অস্বীকারকারীর হুকুম: যাকাত ইসলামের অন্যতম খুঁটি। ক্বোরআন-হাদিসে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বারবার তাগিদ করা হয়েছে। ক্বোরআন-হাদিসের অকাট্য প্রমানাদি দ্বারা যাকাতের বিধান প্রনোদিত হয়েছে। তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ কারো নেই। যাকাত অস্বীকারকারীকে শরিয়ত কাফির বলে আখ্যা দিয়েছে। কেননা ফরযের বিধান অস্বীকার করা কুফুরির অর্ন্তভুক্ত।
যে তা আদায় না করবে সে ফাসিক এবং ক্বাতল হওয়ার যোগ্য। আর যে আদায় করতে বিলম্ব করবে সে গুনাহগার তার সাক্ষি গ্রহণযোগ্য নয়। (আলমগীরি: তরিকুল ইসলাম বাংলা ২য় খন্ড,পৃ.২৬৫)

সদকাহ (Sadaqah):

সাদকাহ বা সদকাহ (আরবি: صدقة, উর্দু: صدقہ, “দানশীলতা”, বহুবচন আদাদকৃত صدقات) একটি ইসলামি পরিভাষা। এর মাধ্যমে স্বেচ্ছা দানকে বোঝানো হয়। কুরআন অনুসারে, এই শব্দের অর্থ স্বেচ্ছাসেবী নৈবেদ্য। যাকাতের মত সদকা বাধ্যতামুলক নয়। যাকাত প্রদানের বাইরে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে সদকা প্রদান করা হয়। অভাব দূর করা ও লজ্জাস্থান আবৃত রাখা সদকার বিধান জারী করার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।শরিয়তের দৃষ্টিতে উত্তম যেকোন কাজে সদাকার অর্থ ব্যয় করা যায়। ইমাম জুরজানী বলেন, “এমন দানকে সদকা বলে যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সওয়াব আশা করা হয়। ইবনে মানজুর বলেছেন, “মহান আল্লাহর নিমিত্তে গরীব মিসকিনদের জন্য দান করাকে সদকা বলা হয়”।

যাকাত ও সদকাহ এর মধ্যে পার্থক্যঃ

সদকাহ’ শব্দটি কুরআন ও সুন্নাহে যাকাত ও সদকা উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হত। যাকাত ও সদকাহ এর মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। নিচে যাকাত ও সদকাহ এর মধ্যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে-

১। যাকাতের ক্ষেত্রে পরিমাণ নির্দিষ্ট, ইসলামী আইন অনুসারে বর্ণিত পরিমাণ অনুসারে এবং বছরে একবার মাত্র প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, সদকাহতে দানের কোনও নির্দিষ্ট শতাংশ নেই এবং যে কোনও ব্যক্তি তার সাধ্য মত যতবার খুশি ততবার এটি প্রদান করতে পারেন।

২। যাকাত অর্থ ও সম্পদ বা পণ্যাদি হিসেবে মুসলমানদের বাধ্যতামূলক ন্যূনতম দান, যা অভাবে থাকা মুসলামানদের সহায়তা করতে পারে, অন্যদিকে সদকাহ অর্থ, কাজ, সম্পত্তি বা অভিবাদন ইত্যাদি।

৩। ইসলাম নির্দিষ্ট কিছু জিনিসে যাকাত জরুরি করেছে, তা হল: স্বর্ণ, রৌপ্য, খাদ্যশস্য, ব্যবসার সামগ্রী এবং চতুষ্পদ পশু- উট, গরু এবং ছাগল। অন্যদিকে, সদকাহ বিশেষ কিছুতে সীমাবদ্ধ নয়; মানুষ তার সাধ্যানুযায়ী বিভিন্ন কিছুর মাধ্যমে তা দিতে পারে।

৪। যাকাত জরুরি ছিল এমন ব্যক্তি মারা গেলে তার ওয়ারিশদের উপর জরুরি হয় যে, তারা তার সম্পদ বণ্টনের পূর্বে সেই সম্পদ থেকে প্রথমে যাকাতের অংশ বের করবে অতঃপর বাকী সম্পদ বণ্টন করবে। অন্যদিকে, তাদের উপর সাদাকা স্বরূপ কিছু বের করা জরুরি হয় না।

৫। যাকাত উসুল ও ফুরূকে দেওয়া নিষেধ। কোনো ব্যক্তির উসুল বলতে তার মাতা, পিতা, দাদা ও দাদীদেরকে বুঝায় এবং ফুরূ বলতে নিজের সন্তান ও সন্তানদের সন্তানকে বুঝায়। অন্যদিকে, সাদাকাহ উসুল ও ফুরূ সকলকে দেওয়া বৈধ।

৬) যাকাত নিজ স্ত্রীকে দেওয়া অবৈধ। অন্যদিকে, সাদাকাহ নিজ স্ত্রীকেও দেওয়া যায়।

৭) কাফের মুশরিকদেরকে যাকাত দেওয়া অবৈধ। অন্যদিকে, কাফের মুশরিকদেরকে সাদাকাহ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।